ঢাকা: উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় কনভেনশন, জেলা ও মহানগরে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ কিংবা সেমিনার ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথমে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা এবং পরবর্তীতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
কর্মসূচি ঘোষণা না করলেও জোটের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বৃহস্পতিবার বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বিএনপি চেয়ারপারসন পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া জোটের এক শীর্ষনেতা বাংলামেইলকে জানান, বৈঠকে সম্প্রতি সংঘটিত গুলশানের ক্যাফে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনাসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে কী করণীয়, বিএনপি চেয়ারপারসন সে বিষয়ে জোট নেতাদের মতামত জানতে চান। জোট নেতারা তখন উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
তিনি আরো জানান, জোট নেতারা ঢাকায় উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী একটি জাতীয় কনভেনশন অনুষ্ঠান, জেলা ও মহানগরে সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশ অথবা সেমিনার ও মানববন্ধনের মাধ্যমে সারাদেশে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। এসব কর্মসূচিই চূড়ান্ত করে জোট প্রধান ঘোষণা করবেন।
জোটের ওই নেতা বলেন, জোটনেত্রী অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। এরপর বলেছেন, সবার আগে দেশ। কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ আজ ভূলুণ্ঠিত। তাই জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। তবে এ ব্যাপারে আমি একা কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আপনাদের কথা শুনলাম, এরপর স্থায়ী কমিটি এবং আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের বক্তব্য শুনব। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বৈঠকে খালেদা জিয়াকে জোটের দুই শীর্ষনেতা বলেন, বর্তমানে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, একদিনে এর সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যেভাবে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করছে সে আলোকে আমাদেরও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে জোটের মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এই কমিটি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা এবং রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করবে।
পরবর্তীতে সেই প্রস্তাবনা নিয়ে জোট ও বিএনপির মধ্যে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে তা চূড়ান্ত করা হবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সে প্রস্তাবনা জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবেন।
খালেদা জিয়া এই প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করে স্থায়ী কমিটি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে আলোচনার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জোট নেতাদের জানান।
বৈঠকে এ ইস্যুতে ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্য দলগুলো বিশেষ করে অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম ও আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সঙ্গেও বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়।
সূত্র জানায়, গত ৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে বরিশাল বাদে দেশের সবকটি মহানগর এবং কয়েকটি জেলা শহর মিলিয়ে ১৯টি জায়গায় জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশ করার প্রস্তাবনা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লিখিত আকারে দেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবের আলোকে আজ (বৃহস্পতিবার) বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ওলামা-মাশায়েখ ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কর্মসুচি চূড়ান্ত করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুল হালিম, জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টিআইএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদু্জ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) মহাসচিব অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ-ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের বৈঠকের পরপরই খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।