ঢাকায় ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সফর শেষ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত নিশা দেশাই বিসওয়াল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ‘সহযোগিতার সুনির্দিষ্ট বার্তা’ বাংলাদেশের নেতৃত্বের কাছে পৌঁছে দিয়ে গেছেন তিনি। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের যে কোনো উদ্যোগে সমর্থন দেয়ার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করে গেছেন তিনি। গতকাল ঢাকা সফর শেষে কলম্বোগামী বিমানে ওঠার আগে নিশা বিসওয়াল নিজেই তার সফরের বিষয়ে একাধিক টুইট মেসেজ দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর শেষ করছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সংহতির বিষয়টি আমি পৌঁছে দিয়েছি। এখানকার সন্ত্রাসী আক্রমণগুলো মোকাবিলা এবং ঘটনার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট পন্থা’ নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। ঢাকায় কূটনৈতিক সমপ্রদায় এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্ধ, যারা উদ্বিগ্ন তবে বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। অপর টুইট মেসেজে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এবং তার টিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। বলেন, আমি গর্বিত এবং সম্মানিতবোধ করি বার্নিকাট ও তার টিমের সঙ্গে কাজ করে। অংশীদারিত্বের বিষয়ে তাদের প্রতিজ্ঞা রয়েছে। গত ১লা জুলাই ঢাকার কূটনৈতিক জোনে জঙ্গিদের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ এলাকা পরিদর্শন এবং নৃশংস ওই আক্রমণে নিহত দেশি-বিদেশিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বিষয়েও পৃথক টুইট করেন নিশা বিসওয়াল। এদিকে গতকাল সফরের শেষদিনে দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন সহকারী মন্ত্রী। এটা ছিল তার ঢাকা সফরের শেষ কর্মসূচি। সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে বৈঠকটি হয়। বৈঠকে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীর, একুশে টিভি’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান প্রমুখ অংশ নেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, সেখানে নিশা বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলেন। তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থাকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এই প্রথম এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীরা যে কোনো স্থানে তাদের মতাদর্শের লোক নিয়োগ দিতে পারে এবং যে কোনো স্থানে আক্রমণ চালাতে পারে। সমপ্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমন ঘটনা ঘটছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অবস্থায় সম্মিলিতভাবে এদের মোকাবিলা করতে হবে। এদের মোকাবিলায় তথ্য বিনিময় এবং প্রযুক্তি ও কৌশলগত দক্ষতা অপরিহার্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে তার দেশ প্রস্তুত। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সেই সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো আলোচনা হয়েছে বলেও বৈঠকে উল্লেখ করেন তিনি। বৈঠকে অংশ নেয়া একজন সিনিয়র সাংবাদিক মানবজমিনকে বলেন, এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম কী ভূমিকা রাখতে পারে মার্কিন প্রতিনিধি তা জানার চেষ্টা করেছেন। তিনদিনের সফরে মার্কিন সহকারী মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও তার দুই উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী-সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে রাতে ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কূটনীতিকের সঙ্গে নৈশভোজ সারেন নিশা। সেখানে নিরাপত্তা পরিস্থিতিই মুখ্য আলোচ্য ছিল। এর আগে ওইদিন সকালে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার তিন শীর্ষ কূটনীতিকের সঙ্গে বাংলাদেশের সামপ্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন তিনি। সফরের প্রথমদিনে ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয় তার। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের বিশ্লেষণ জানতে চান তিনি।