বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ

Slider শিক্ষা

 

 

 

22303_unv

 

 

 

 

সম্প্রতি গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলায় শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার পর কয়েকজন শিক্ষকের নাম সামনে এসেছে। এ বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের  ওপর নজরদারি জোরদারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তথ্য চাওয়া হবে। প্রায় ৫ হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়ে এ তথ্য সংগ্রহ করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বেরসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও তার অতীত সম্পর্কে যতদূর সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এখন থেকে সন্দেহভাজন শিক্ষকদের ওপর নজরধারী রাখা হবে। প্রয়োজনে সকলের অতীত ইতিহাস খোঁজে বের করা হবে। যারা ধর্মের নামে উগ্রবাদ সৃষ্টি করছে, জঙ্গিবাদের প্ররোচনা দিচ্ছে তাদের ছাড়া দেয়া হবে না। এসময় দেশের প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষক সম্পৃক্ত ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে আমরা এখন অনেক বেশি সচেতন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে গতকাল মাউশি থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৭ই জুলাই সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাবের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। একই সঙ্গে ২৩শে জুলাই দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রালয়। জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ও জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। দেশে বর্তমানে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টিতে শিক্ষা কার্যত্রুম চালু রয়েছে। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ২১৯ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৪২৭ জন পূর্ণকালীন এবং ৪ হাজার ৭৯২ জন খণ্ডকালীন হিসেবে কর্মরত। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত খণ্ডকালীন শিক্ষকদের বেশি নজরধারী বাড়াতে হবে। কারণ, তারা কোনো ধরনের অপরাধ বা জঙ্গি সম্পূক্ততা থাকলে এদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। ইউজিসির তথ্যমতে, নামিদামি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক বেশি।
এ ব্যাপারে ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, সরকার এ ধরনের তথ্য এখনও চায়নি। চাইলে প্রয়োজনী তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ব্যাপারে এবার অ্যাকশন নেয়া হবে। তিনি বলেন, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে লাভবান তারাই সবচেয়ে বেশি খণ্ডকালীন শিক্ষক রেখেছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জঙ্গিবাদী তৎপরতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে দেশের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এ তালিকায় এসেছে দেশের এক ডজন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯টি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও নামকরা কয়েকটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম বৈঠকটি হবে আগামী ১৭ই জুলাই রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। এরপর ২৩শে জুলাই হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, দেশ ও ধর্মবিরোধী জঙ্গিবাদী তৎপরতার সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবার সঙ্গে কথা বলা ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *