জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে মন্ত্রী, এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত নিয়মিত এজেন্ডার পর অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। এ সময় মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনা তুলে ধরেন। একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, অনির্ধারিত আলোচনায় বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক, আইন মন্ত্রী আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্্নু অংশ নেন। ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সমাবেশের ওপর জোর দিয়ে বলেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সরকারের কর্মসূচি জনগণকে বেশি করে জানানো প্রয়োজন। এ জন্য ১৪ দলের একটি সমাবেশ আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া, অন্য মন্ত্রীরা তাদের আলোচনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন। বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘ভাইয়া’ সংস্কৃতি চালু করেছে। একজন ছাত্রের সঙ্গে শিক্ষকের ভাইয়া সম্পর্ক সুফল বয়ে আনে না। বরং এর নেতিবাচক দিকই বেশি। কারণ ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ভাইয়া হলে ছাত্রদের মোটিভেশন করতে সুবিধা হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবেই ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এটা থেকে আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এক মন্ত্রী তার আলোচনায় বলেন, জঙ্গিদের শিকড় অনেক গভীরে। শোনা যায় তাদের বিশেষ ধরনের ট্যাবলেট খাইয়ে জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকানো হয়। গুলশানের ঘটনাস্থল ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার আশেপাশে বাড়িভাড়া নিয়েছিল তারা। যাতে তাদের কার্যক্রম চালাতে সুবিধা হয়। তাই তাদের মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করতে হবে। পাশাপাশি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আদ্যোপান্ত জানা দরকার।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা কেন জঙ্গির দিকে ঝুঁকছে, কারা শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছে ও কিভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার প্রয়োজন রয়েছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু শোলাকিয়ার ঘটনার বর্ণনা করে মন্ত্রিসভাকে বলেন, এ বছর শোলাকিয়ায় বেশি মুসল্লির সমাগম হয়েছিল। জায়নামাজ ছাড়া কাউকে কিছু নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। প্রবেশ গেটে ছিল কড়া নিরাপত্তা। তাই আজিমুদ্দিন হাইস্কুলের পাশে চেক পয়েন্টে জঙ্গিরা বাধা পাবে জেনে একটি বোমা ফুটায়। ওই সময় ১২ জন পুলিশের মধ্যে ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। এক চাকমা পুলিশ কনস্টেবল সাহসিকতার সঙ্গে সন্ত্রাসীকে গুলি করলে ওই সন্ত্রাসী মারা যায়। মন্ত্রীদের বক্তব্যের পর জঙ্গি সম্পর্কে একটি ছড়া শোনান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। ছড়ায় তিনি বলেন, ‘হারানো জীবন দেখে/চোখে ছিল জল/কর্তব্য পালনে দৃঢ়/কণ্ঠ অবিচল/দিতে হবে মাসুল সবে/পিছনেতে যারা/জাতির পিতার কন্যা/কভু নহে দিশাহারা’।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রীর এ ছড়া উপস্থিত মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রশংসা কুড়ায়। ছড়া শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার উদ্দেশে বলেন, গুলশানে হামলার মতো ঘটনা ফ্রান্স, তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ঘটছে। আমরা দৃঢ়ভাবে সবকিছু মোকাবিলা করছি। তিনি বলেন, সব ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেউ নিখোঁজ হলে তা গোপন না করে সংশ্লিষ্টদের জানাতে হবে। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ অনুপস্থিত থাকলেও তাও যেন সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়। প্রতিটি স্থানে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি এলাকা যেন আমাদের নজরদারিতে থাকে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। গুলশানে হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে গুলশানের ঘটনা মোকাবিলা করেছে। দেশের বাইরে অনেকে মনে করতে পারে যে আমরা পশ্চাৎপদ। কিন্তু আমরা তা নই। আমরা ভালোভাবেই গুলশানের ঘটনা সামাল দিতে পেরেছি। এদিকে মন্ত্রিসভা বৈঠকে কৃষিতে তথ্য- প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় গবেষণা কার্যক্রমের সুযোগ বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৬ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ অনুমোদনের কথা জানিয়ে বলেন, এ আইনটি ১৯৭৬ সালে অধ্যাদেশ আকারে প্রণয়ন করা হয়।
এরপর ১৯৮৪ ও ১৯৯৬ সালে এটি সংশোধন করা হয়। সামরিক শাসনামলের হওয়ায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটিকে আইনে পরিণত করতে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা হয়েছে। কৃষি গবেষণাকে ‘আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী’ করার বিষয়টি মাথায় রেখে এই খসড়া করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষি গবেষণা ১৯৭৬ সালে যেখানে ছিল, এখন আর সেখানে নেই। পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটা করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে সংযোজিত নতুন বিষয়ের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ, ইনস্টিটিউটে নতুন জাতের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা, কৃষিতে আইসিটির প্রয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শস্য উৎপাদনের জন্য পঞ্জিকা তৈরি ও প্রকাশের কথাও রয়েছে। খসড়া থেকে উদ্ধৃত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রয়োজনীয় দেশি ও বিদেশি প্রশিক্ষণ এবং উচ্চশিক্ষা প্রদানে এই ইনস্টিটিউট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যদি এই বোর্ডের সদস্য বা পরিচালক সরল বিশ্বাসে কোনো কাজ করেন, সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো দেওয়ানি বা ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। আগের অধ্যাদেশে ১৮টি ধারা থাকলেও নতুন আইনের খসড়ায় আরো চারটি ধারা যোগ করা হয়েছে।