‘পরশমণি’তে সেমাই পিঠা খেয়েই হামলার প্রস্তুতি

Slider জাতীয়

 

untitled-12_223221

 

 

 

 

 

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের শোলাকিয়া নীলগঞ্জ সড়কের ‘পরশমণি’ নামের বাড়িটির মালিক অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মো. আবদুস সাত্তার। ১ জুলাই বাড়ির নিচতলার দুটি কক্ষ মাসিক ৬ হাজার টাকায় ভাড়া নেন কিশোরগঞ্জে হামলায় নিহত জঙ্গি আবীর রহমান। ভাড়া নেওয়ার সময় আবীর নিজেকে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের ছাত্র পরিচয় দেয়।

বাড়ির মালিককে সে জানিয়েছে, তারা চার বন্ধু বাসায় থাকবে। ঈদের দিন সকালে বাড়ির মালিকের স্ত্রী শামসুন্নাহার স্বামীকে চার তরুণের খোঁজ নিতে নিচে পাঠান। আবদুস সাত্তার নিচে গেলে কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আবীর রহমান। আবদুস সাত্তার জানতে চান_ বাবারা, তোমরা কতজন আছ? আবীর উত্তর দেয় চারজন। মালিক বলেন, ঈদে বাড়ি যাওনি কেন? উত্তরে আবীর বলে, আঙ্কেল, শোলাকিয়া বড় ঈদের জামাতে কখনও নামাজ পড়িনি। তাই প্রথমবারের মতো নামাজ পড়ে বাড়ি চলে যাব। তখন মালিক বলেন, ঈদের দিন কিছু খেয়ে নামাজে যাও। পরে আবদুস সাত্তার চারজনের জন্য সেমাই-পিঠা নিয়ে গেলে আবীর রহমান দরজার সামেন থেকে তা গ্রহণ করে ভেতরে নিয়ে যায়। কিছু সময়ের মধ্যে সেমাই-পিঠা খেয়ে খালি প্লেট আবীর নিজেই দ্বিতীয় তলায় মালিকের ফ্ল্যাটে নিয়ে যায়। তাদের এমন বিনয় ও ভদ্রতা দেখে মালিকের স্ত্রী বেশ খুশি হন। এরপর সকালে কখন তারা বাসা থেকে বের হয়ে যায়, তা জানতে পারেননি বাড়ির লোকজন। দুটি কক্ষে আসলে কতজন ছিল তাও জানতে পারেননি তারা। পরে জানতে পারেন, শোলাকিয়ায় হামলাকারী আবীর তাদের বাসারই ভাড়াটে।

চারজনেই গুরুদয়াল কলেজের সম্মান শ্রেণির শিক্ষার্থী। দু’জন ইংরেজি বিভাগ এবং দু’জন অর্থনীতির। বাসা ভাড়ার জন্য আবীর দুই হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করে। আবীর নিজের নাম বলে জয়নাল আবেদিন। ০১৮৩৩-৬১৪৬৯৮ ফোন নম্বরও দেয় মালিকের কাছে। আবীর তার বাড়ি অসিমবাজার, ফুলবাড়িয়া, জেলা ময়মনসিংহ বলে পরিচয় দেন। বাড়ি ভাড়া নেওয়ার পরদিন মালিকের চাচা জয়নাল আবেদীন মারা গেলে আবদুস সাত্তার কটিয়াদীর ধুলদিয়ায় গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ঈদের দু’দিন আগে তারা সপরিবারে শহরের ‘পরশমণি’ বাড়িতে ফেরেন। গণমাধ্যমে জঙ্গি হামলার ঘটনা দেখলেও প্রথমে তারা বুঝতে পারেননি তাদের বাসার ভাড়াটিয়া যুবকই সেই জঙ্গি। রাতে পুলিশ-র‌্যাব এসে বাড়ি তল্লাশি করলে তারা বুঝতে পারেন, সেই ভদ্রবেশী যুবকই জঙ্গিদের একজন।

এদিকে, গতকাল রোববার ঢাকা থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল ওই বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন আলামত জব্দ করে। এ সময় তারা কক্ষের ভেতরের একাধিক ছবি তোলে। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন  বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *