ঢাকা : গুলশানের হলি আর্টিসানে রক্তের দাগ না শুকোতেই আবার জঙ্গিহামলা। তাও পবিত্র ঈদুল ফিতরে। এবার কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে বোমাহামলায় হতাহত বেশ কয়েকজন।
হামলার পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘হামলাকারীরা রেহাই পাবে না’ বলে সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে বললেও ‘ব্যর্থতার’ দায় কাঁধে নিয়ে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছেন দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) শোলাকিয়া মাঠের আড়াইশ মিটারের মধ্যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন নিহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন ৪ জন। আরও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ পুলিশ সদস্যকে গুরুতর অবস্থায় হেলিকপ্টারে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারী নিহত হন।
জঙ্গিদের সঙ্গে যখন পুলিশের লড়াই চলছিল তখন ঘরের ভেতরেই ছিলেন ঝর্না রানি ভৌমিক (৩৪)। জানালা দিয়ে হঠাৎ গুলি এসে তাকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। চর শোলাকিয়ায় বাড়ি নিহত ঝর্না রানির। তার স্বামী গৌরাঙ্গ ভৌমিক।
মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরে ঈদ জামাতের পাশে এ ধরনের জঙ্গিহামলা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম।
গণভবনে ঈদশুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সংবাদকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের দিনে যারা মানুষ হত্যা করে তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না। জঙ্গিদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই। এরা দেশের মানুষের কাছে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ঘৃণিত বস্তু। এদের ঠাঁই জাহান্নামে হবে। এরা কোনোদিন বেহেশত পাবে না।’
সরকারের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী, আমাদের অভিযান সফল হবে। জনগণের নিরাপত্তার জন্য সরকার সবকিছুই করবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’
অপরদিকে ঈদশুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শোলাকিয়ায় হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির চেয়ারপারসন ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বলেছেন।
সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তার দায় নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সরকার কোনো ঘটনাই ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারেনি অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) হত্যাকাণ্ড দিয়েই এসব হত্যার সূত্রপাত। বিডিআরের ওই ঘটনা তখনই যদি শক্তভাবে দমন করা যেত, তা হলে আজকে বাংলাদেশে কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পেত না।’
গত ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিসান বেকারিতে ছয় বন্দুকধারী হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জিম্মিকে জবাই হত্যা করে। পরদিন শনিবার সকালে সশস্ত্র বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালালে জিম্মি সঙ্কটের অবসান হয়।
গুলশানকাণ্ডের পর পরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নজিরবিহীন ওই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারের পাশে থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়াইয়েল প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবও দেন তিনি। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের অনেকেই ‘শর্ত’ মানলেই ঐক্য প্রস্তাব মানবেন বলেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালেও বিএনপির চেয়ারপারসনের ঐক্য প্রস্তাবে ‘সাধুবাদ’ জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে এ জন্য তিনি জামায়াতে ইসলামীকে তাদের জোটমুক্ত করার শর্ত জুড়ে দেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরই আস্থা না কি বিএনপির চেয়ারপারসনের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে ক্ষমতা ত্যাগ— দুটোই নির্ভর করছে জনগণ কী চান তার ওপর।