ঢাকা : রমজানে ঢাকায় থাকা বিএনপির সিনিয়র, মাঝারি সারি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা এবারও ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। এদের কেউ কেউ দলীয় ও রাজনৈতিক কারণে রাজধানীতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ঈদের নামাজ পড়ে তারা দলীয় চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন। তবে অনেকে আবার নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ঈদ করবেন।
এদিকে, ঢাকায় যারা ঈদ করবেন তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার গরিব ও দুস্থদের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গি, চিনি-সেমাই বিতরণ করেছেন। ঈদের পরে তাদের অনেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাবেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকায় ঈদ উদযাপন করবেন। ঈদের দিন দুপুর ১২টা থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন (চীন মৈত্রী) কেন্দ্রে কূটনীতিক, বিশিষ্ট নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে খালেদা জিয়া প্রথমে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর এবং পরবর্তীতে বনানীতে ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন। এরপর বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
বিগত কয়েক বছর ধরে স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ইংল্যান্ডে ঘরোয়া পরিবেশে ঈদ উদযাপন করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এবার তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গে তার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়ে ঈদ উদযাপন করবেন। প্রয়াত কোকোর পরিবার মালয়েশিয়ায় থাকলেও গত ছয় মাস মতো আগে তারা ইংল্যান্ডে চলে যান বলে জানা যায়।
এদিকে, আন্তর্জাতিক একটি সেমিনারে অংশ নিতে এখন অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশ সময় বুধবার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে দেশটিতে পৌঁছান তিনি। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা ০৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি। সঙ্গে স্ত্রী রাহাত আরা বেগম রয়েছেন। সপ্তাহখানেক তারা সেখানে থাকবেন। ফলে এবার অস্ট্রেলিয়াতেই ঈদ করবেন মির্জা ফখরুল।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস; ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঢাকায় ঈদ করবেন। ঈদের নামাজ পড়ে তারা দলীয় চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। মওদুদ আহমদের ঈদের পরেরদিন নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে যাওয়ার কথা রয়েছে। ঢাকায় অবস্থানরত স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এরপর বিকেলে নির্বাচনী এলাকা কেরানিগঞ্জের সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি।
স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বিগত সময় নিজ নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুরে ঈদ করলেও এবার ঢাকায় থাকছেন। কিছুদিন আগে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীসহ আহত হন। সিএমএইচ-এ চিকিৎসা শেষে ডাক্তারদের পরামর্শে তিনি বনানীর বাসায় বিশ্রামে আছেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম নিজ নির্বাচনী এলাকা যশোরে ঈদ করবেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ তরিকুল বর্তমানে সেখানেই অবস্থান করছেন। এছাড়া তার ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতও যশোরে ঈদ উদযাপন করবেন। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ মুন্সিগঞ্জে এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম বাগেরহাটে ঈদ করবেন।
এদিকে, স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান ওমরাহ করতে সৌদিআরব আছেন। ফলে সেখানে ঈদ করবেন তিনি। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ঈদের নামাজ পড়লেও ওইদিনই ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এছাড়া চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক ও অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালামও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ফলে তারা সেখানেই ঈদ করবেন।
অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের আদালতে বিচারাধীন রয়েছেন বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। ফলে তাকে সেখানেই ঈদ করতে হচ্ছে।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন; সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার তাদের নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রামে ঈদ করবেন বলে জানা গেছে।
ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান; চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং যুগ্ম মহাসচিব হারুন-অর রশিদ ঢাকায় ঈদ করবেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও শামা ওবায়েদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু চেয়ারপারসনের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন নোয়াখালীতে, মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর, নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা, ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম এবং সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান নিজ নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ করবেন।
এদিকে, যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহাগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় পরোয়ানা থাকায় তিনি ফেরারি হিসেবে ঈদ করবেন।
বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেকেই ঢাকায় ঈদ করবেন।