স্বাধীন বাংলাদেশের একটি ছোট অংশ ১২ ঘন্টার জন্য নিয়ন্ত্রনের বাইরে গিয়েছিল। রক্তের বিনিমিয়ে আমরা তা উদ্ধার করেছি। এই ঘটনায় দেশী বিদেশী ২২ জন লোক মারা গেলেন। । এদের মধ্যে দুই জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। একই সাথে মারা গেলেন আমাদের বিপথে চলে যাওয়া ৬জন। মোট ২৮ জন মারা গেলেন। দেশে বিদেশে এখন আমরা সুপরিচিত। বিশ্ব মিডিয়ায় আমরা এখন শিরোনামে আছি। মারা যাওয়া বিদেশী নাগিরকদের দেশ বলছে বিশ্ব নেতৃবৃন্ধকে সোচ্চার হতে। আর ইতালী বলছে, এই হামলার জন্য আমাদের বড় দুই দল দায়ী। সুতরাং বিশ্বে আমাদের বর্তমান অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা আমরা আচঁ করতে পারছি কি না জানিনা। তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে পারি, সরকারী দল, বিএনপি জামায়াতকে ইঙ্গিত করছে। আর বিএনপি-জামায়াত বলছে সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, বেগম জিয়ার বিবৃতি খুনীদের পক্ষে। সব মিলিয়ে বলা যায়, গুলশান ট্রাজেডিও রাজনীতির শিকার।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো মনে হয় ভুলে গেছেন যে, আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা জাইকার ৬ শীর্ষ কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন যারা বিদেশী নাগরিক। সুনাম দুর্নামকে উপেক্ষা করে জাইকা আমাদের সহযোগিতা করে আসছে এটা আমাদের মনে নেই। আমরা আতঙ্কিতও নই যে জাইকা আমাদের ছেড়ে গেলে ও বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে গেলে আমাদের কি অবস্থা হতে পারে।
আমরা রাজনৈতিক কারণে বড় বড় কথা বলতে পারি। কিন্তু মনে থাকে না যে, গরীবের রাগ থাকতে নেই। বাংলাদেশ জন্মের পর এই প্রথম এক ধরণের সবচেয়ে বড় ঘটনায়ও আমরা বিব্রত নই বলেই মনে হচ্ছে। এখনো আমরা নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ। আমরা নিজেরা নিজেদের প্রশ্ন করছি না যে, কেন এই দূর্ঘনা হল। বিদেশী নাগরিকেরা বারবার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলার পরও আমরা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারিনি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জায়গা ডিপ্লোমেটিক জোনেও আমরা নিরাপত্তা দিতে পারিনি।
অপরাধ বিজ্ঞান মতে, কোন ঘটনা ঘটার পর তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমেই দেখতে হয়, মূল ভ্যানুর কে বা কারা অপরাধীদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর বিনা রক্তপাতে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে রাস্তায় যুদ্ধ না করে কি ভাবে অপরাধীরা মুল ভ্যানুতে প্রবেশ করলেন? এতে নিরাপত্তা রক্ষীদের কেউ জড়িত আছেন কি না? এই সব খতিয়ে না দেখে আমরা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রুপদান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ঘরের নিয়ন্ত্রন রক্ষা করতে গিয়ে বা নিয়ন্ত্রন নিতে গিয়ে ঘরটিই হুমকির মুখে পড়েছে তা আমরা আন্দাজই করতে পারছি না। এর মানে হল আমরা লজ্জা সরমের মাথা খেতে যাচ্ছি। বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে দাাঁড়াচ্ছে সে দিকে খেয়াল না করে আমরা নিজেরা অন্ত:কলহে লিপ্ত হয়ে অতীত ঐতিহ্যৃ রক্ষায় পরস্পর পরস্পরকে দোষারুপ করছি। সত্যি এটি লজ্জার বিষয়। তাই এখনো সময় আছে, জতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা।
একটি সংবাদ কোট করে বলছি;
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার জন্য বাংলাদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলকে সরাসরি দায়ী করছে ইতালিয় গণমাধ্যম। গতকাল ইতালির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘রাই নিউজ’র এক সংবাদ বিশ্লেষণে এই হামলার জন্য বাংলাদেশের দুই প্রধান দলকে সরাসরি দায়ী করা হয়।
এতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডসমূহের ধারাবাহিকতার উল্লেখ করে বলা হয় দোষারোপের রাজনীতিই গুলশানে জঙ্গি হামলার রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে। একই বক্তব্য এসেছে ‘স্কাই নিউজ’র সংবাদ বিশ্লেষণেও। স্কাই নিউজের একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘একনায়ক’ এবং বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘ইসলামপন্থীদের নেতা’ হিসেবেও বর্ণনা করে।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাতে রাজধানীর ডিপ্লোমেটিক জোনের ওই রেস্টুরেন্টে বন্দুকধারী জঙ্গিদের হামলায় ৯ ইতালিয় নাগরিক নিহত হয় বলে জানিয়েছে আন্ত:বাহিনী গণসংযোগ বিভাগ (আইএসপিআর)। তবে ইতালির স্থানীয় গণমাধ্যম দাবি করছে তাদের আরও একজন নাগরিক নিখোঁজ রয়েছে। গুলশানের ঘটনায় মৃতের সংখ্যায় ইতালিয় নাগরিক বেশি। সে কারণে বর্তমান সময়ে ইতালির প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে ওই হামলা।