ঢাকা : ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর চারলেন মহাসড়ক আগামীকাল শনিবার (২ জুলাই) থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মহাসড়ক দু’টি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর থেকে যান চলাচলের জন্য মহাসড়ক দু’টি খুলে দেয়া হবে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোপুরি চালু হলে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে বলে জানান সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
শুক্রবার (১ জুলাই) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিয়ার্স ইনিস্টিউটশনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আয়োজিত সড়ক স্বেচ্ছাসেবক ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আগামী ২ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শুভ উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে আমরা দেশবাসীর উদ্দেশে এ নিবেদন করছি।’
ইতিমধ্যে মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার সড়কে ২৩টি ব্রিজ, ২৪৩টি কালভার্ট ও ১৪টি বাইপাসসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হয়েছে। চারলেন মহাসড়কের মাঝখান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছানুযায়ী বিশেষ কিছু বৃক্ষরোপণ করা হবে। এরপর আগামী বছরের শেষ ভাগ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ২২৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করা হবে।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের পাশাপাশি ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর চারলেনের সড়কও একই সময়ে উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী জানান, ঢাকা-চট্টগ্র্রাম মহাসড়কটি অর্থনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক।
উল্লেখ্য, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সড়কপথে যোগাযোগ যুগোপযোগী, সহজতর, দ্রুত, যানজটমুক্ত ও উন্নততর করার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ঢাকা-চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুততর, নিরাপদ, যানজটমুক্ত ও সহজতর হলো, যা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা বহন করবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের কাঁচপুর (মুক্তিসরণী) হতে দাউদকান্দি পর্যন্ত অংশে এক মিটার প্রশস্থ ডিভাইডারসহ চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সমাপ্ত হয়। এ মহাসড়কের দাউকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার অংশ চারলেনে প্রশস্তকরণ প্রকল্পটি এডিপিভুক্ত অনুমোদিত।
মোট ১৫টি প্যাকেজের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এরমধ্যে সড়ক নির্মাণে ১০টি প্যাকেজ ও সেতু নির্মাণে তিনটি প্যাকেজ তথা পূর্তকাজে মোট ১৩টি প্যাকেজ, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বিষয়ে একটি ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে একটি প্যাকেজ রয়েছে।
তৃতীয় সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি অর্থায়ন করছে জাপান ঋণ মওকুফ তহবিল-জেডিসিএফ।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী হতে কাঁচপুর অংশ ইতোমধ্যে আটলেনে উন্নীত করা হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হওয়ায় এ সড়কের উপর যানবাহন এবং পণ্যবাহী পরিবহনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এ মহাসড়কে কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী সেতু তিনটি বাড়তি যানবাহনের চাপ মোকাবিলা করতে পারছে না। এ বাস্তবতায় সরকার জাইকার অর্থায়নে তিনটি সেতুর পাশে আরো নতুন ৩টি সেতু নির্মাণকাজ শুরু করেছে। ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সরকার সদ্যসমাপ্ত চারলেন মহাসড়কের পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে।
জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ
শিল্পাঞ্চল গাজীপুর জেলা এবং কৃষিজাত পণ্যের ভাণ্ডার বৃহত্তম ময়মনসিংহ জেলার জনসাধারণের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পূর্বে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করতে প্রায় চারঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন ভ্রমণসময় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহন সময় ও ব্যয় কমে এসেছে।
ইতোপূর্বে জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাতায়াতে মাওনা চৌরাস্তার যানজট ছিল অসহনীয়। প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের মাওনায় একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বর্তমানে যানজট ছাড়াই যাত্রী ও পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৭ কিলোমিটার জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কটিতে মিডিয়ান নির্মাণসহ ১৫৫টি কালর্ভাট, পাঁচটি নতুন সেতু, একটি ফ্লাইওভার, একটি রেলওভার পাস, পথচারীদের নিরাপদ সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে চারটি স্টিল ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সড়কটির নূন্যতম প্রশস্ততা ২১ দশমিক ২ মিটার এবং বাজার ও বাণিজ্যিক অংশে প্রশস্ততা প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ মিটার। এ সড়কের বিশেষ দিক হলো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সড়কের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাস-বেসহ ৩ হাজার ৪২৫ মিটার কংক্রিট পেভমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
মহাসড়কে ভ্রমণ আনন্দদায়ক ও পরিবেশবান্ধব করতে ঋতুর সাথে মিল রেখে নানান প্রজাতির গাছ এবং ঋতুভিত্তিক ফুলগাছ রোপন করা হয়েছে। মহাসড়কটি দৃষ্টিনন্দন করতে গাজীপুরে সংরক্ষিত বনাঞ্চল অংশে মিডিয়ান নয় মিটার প্রশস্ততায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি চারটি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও (পশ্চিম) যৌথভাবে অত্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করায় প্রকল্পটির কাজ শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে।