সরকারি চাকরিজীবীদের ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ৩০ জুন। আর বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেশির ভাগের ঈদের ছুটি ৪ জুলাইয়ের পর থেকে। এ দু’দিনেই ব্যাপক হারে রাজধানীবাসী ঈদ করতে বাড়ির পথ ধরবেন। গতকাল রোববার ৩০ জুন ও ৪ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এই দু’দিনের টিকিটের চাহিদাও যে বেশি থাকবে- তা আগেই অনুমান করা হয়েছিল। তবে যাত্রীদের ভিড় অনুমান ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল কমলাপুর স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীদের ভিড় ছিল গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
ব্যস্ত দু’দিনের টিকিট বিক্রির দিন মিলে যাওয়ায় যাত্রীর চাপ ছিল অত্যধিক। দুপুর ১টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে দেখা যায়, ১ থেকে ৫ নম্বর কাউন্টারে যাত্রীদের সারি যেন সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। ছোট্ট চত্বরে মানুষ ধারণের মতো জায়গা নেই। এমন ভিড়ের মধ্যে টিকিট কালোবাজারিও শুরু করে একটি চক্র। তবে তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়ায়নি। র্যাব সদস্যরা তিন কালোবাজারিকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করেন। র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজ আহমেদ তিন কালোবাজারির দু’জনকে সাত দিন করে কারাদণ্ড ও একজনকে পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।
কমলাপুর স্টেশনের পূর্ব পাশে ৬ থেকে ২০ নম্বর কাউন্টারেও বিক্রি করা হচ্ছে ঈদযাত্রার টিকিট। সেখানেও একই রকম ভিড়। ৭ নম্বর কাউন্টারে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ লাইনের আন্তঃনগরের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। যাত্রীদের সারি এঁকেবেঁকে এগিয়ে গেছে। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। ঢাকা-ময়মনসিংহ লাইনের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হয় ১২ নম্বর কাউন্টারে; সেখানেও একই চিত্র।
রোজায় সাধারণত সেহরি খেয়েই টিকিটের লাইনে দাঁড়ান যাত্রীরা। দুপুর নাগাদ টিকিট পেয়েও যান। আগের তিন দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়া গেছে। তবে গতকাল বিকেল পৌনে ৫টায় দেখা গেল, ভোররাতে যারা দাঁড়িয়েছিলেন তারা টিকিট পাননি। তার আগেই সব টিকিট শেষ। কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীরা ভিড় করছেন স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী ও স্টেশন মাস্টার নৃপেন সাহার কক্ষে। দু’জনের কেউই নেই দুপুরের পর থেকে।
স্টেশন ম্যানেজারের কার্যালয়ের এক কর্মচারী জানালেন, যাত্রীর প্রচণ্ড চাপ। তাই স্টেশন ম্যানেজার দুপুর থেকে একটু ‘আড়ালে’ আছেন। কথা বলার জন্য এক ঘণ্টা খুঁজেও স্টেশন ম্যানেজারকে পাওয়া গেল না। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। স্টেশন মাস্টারও ছিলেন ‘আড়ালে’। তাকেও খুঁজে পাওয়া গেল না। তবে তার টেবিলে একের পর এক জমা হয়, ভিআইপি কোটায় টিকিট বরাদ্দ দেওয়ার চাহিদাপত্র। প্রতিটি ট্রেনের ৫ শতাংশ টিকিট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত। নারায়ণগঞ্জের এমপি গাজী গোলাম দস্তগীরের নামে ১৮টি টিকিটের চাহিদাপত্র জমা পড়ে একসঙ্গে।
অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রইলেন স্টেশন ম্যানেজারের কার্যালয়ে। তারা সবাই ম্যানেজারের পূর্বপরিচিত। টিকিট চাইতে এসেছেন। তবে দেখা পাচ্ছেন না। ভিড় করেন সাধারণ যাত্রীরাও। তাদের অভিযোগ, কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা টিকিট পাননি।
দেওয়ানগঞ্জের যাত্রী মনিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৭টায় স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়ান। সামনে কয়েকশ’ মানুষ। তিনি কাউন্টারে পেঁৗছানোর আগেই শোনেন টিকিট শেষ। সাত ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাননি।
অনেক যাত্রীকে দেখা গেল, খবরের কাগজ মেঝেতে বিছিয়ে শুয়ে-বসে লাইন ধরেছেন। সাড়ে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে মানুষ! খাওয়া-দাওয়া, টয়লেটে যাওয়ার ব্যাপারও তো থাকে। কিন্তু একবার লাইন ছেড়ে গেলে আবার সবার পেছনে দাঁড়াতে হবে। তাই নড়ারও সুযোগ নেই।’
গতকাল সকাল থেকেই ছিল তীব্র গরম। উচ্চ আর্দ্রতার কারণে ভ্যাপসা গরমে ঘামছিলেন লাইনে দাঁড়ানো যাত্রীরা। নারীযাত্রীদের লাইন অন্যান্য বছর ছোট হলেও, এবার সেখানেও উপচেপড়া ভিড়। জায়গা না হওয়ায় জিলাপির প্যাঁচের মতো এঁকেবেঁকে দাঁড়াতে হয়েছে। রেলের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন সিফাত রাব্বানা নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ‘পুরুষদের জন্য ১৪টি কাউন্টার থেকে টিকিট দিচ্ছে। আর মেয়েদের জন্য মাত্র একটি কাউন্টার।’