ডা.মাজহারুল আলম: বিঞ্জানী কোপার্নিকাস অবশেষে দেশ হইতে পালাইয়া জীবনে বাঁচিল।তাহার পাপ ছিল ‘পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরিতেছে’-এই কথা বলা। কিন্তু গ্যালিলিওর ভাগ্যে বুঝি আর বাঁচিবার আশা রইল না। তা-ও আবার গুরুতর অপরাধ। ইটালির মান মন্দিরের চেয়ে ক্যাথলিক মন্দিরের ক্ষমতা যে অনেক বেশী। নূতন আবাষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়া মহাকাশ দর্শনের ক্ষমতা হয়তো বা গ্যালিলিওর ছিলঃ-। কিন্তু শূলে চরাইয়া মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার মহা শক্তি যে রাজ মন্দিরের হাতে রহিয়াছে তাহা কি হতভাগ্য বিঞ্জানী জানিত না? মহাকাশ হইতে কি চার্চের মন্দিরের দূরত্ব বেশী? গ্যালিলিও কয়েদখানায় মৃত্যুর প্রহর গুণিল দিনের পর দিন।
এতদিনে বাল্যবন্ধু যুবরাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। বন্ধুর প্রাণ বাঁচাইতেই হউক কিংবা রাজ মন্দিরের মান বাঁচাইতেই হউক সিদ্ধান্ত হইল গ্যালিলিওকে মুক্তি দেওয়া হইবে।তবে তাঁকে অতি ছোট্ট একটি কথা বলিতে হইবে–” পৃথিবী ঘুরিতেছে না।”
যুবরাজ বন্ধুর অনুরোধ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শ, মা’য়ের আকুতি,সম্ভবতঃ জীবনের মায়া ইত্যাদি কারনে বিঞ্জানী রাজী হইয়া গেলো।
রাজ্য সভায় শত শত লোক ডাকা হইল। সর্বত্র রাজ মন্দিরের উৎসাহ চলিল। বিঞ্জানী আজ ভুল স্বীকার করিবে। মহা আয়োজনে মাথানীচু গ্যালিলিওকে জনাকীর্ণ রাজসভায় আনা হইল। রুদ্ধশ্বাস জনতা, রাজার প্রহরী, গির্জার পাদ্রী,আত্মীয়গণ প্রহর গুনিল। অবশেষে বিঞ্জানী মাথা উঁচু করিয়া একবার আকাশের দিকে তাকাইল। কিছু একটা বলিতে গিয়া কিছুটা ইতস্ততঃ করিল।
অতঃপর ইতস্ততঃ করিতে করিতে বিঞ্জানী বলিল……”কিন্তু….যাহাই…..হউক….পৃথিবীই ঘুরিতেছে…………।
তারপর কি ঘটিয়াছিল?
তাঁহার জীবন গিয়াছিল। প্রাণদন্ড বিঞ্জানীকে অমর করিল। হায় রে, ভ্রান্ত, মূর্খ রাজার দল এত কাহিনীর পরে আজও বুঝিতেছ,”যে আবার সত্যিকারের সময় কখনো আসিবে না।” হয়তো বা সত্য-ন্যায় চিরতরেই বিলীন হইত,…..”কিন্তু…পৃথিবীই…ঘুরিতেছে।।