ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়াকে রাশিয়ার জন্য বড় বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ব্রেক্সিটে হাসি ফুটেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখে। কিন্ত কেন? সে বিশ্লেষণেই নেমেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, বেক্সিটের ঘটনায় বিশ্বরাজনীতির বল এখন রাশিয়ার কোর্টে। এবার জমবে বেশ। ইচ্ছেমতো একটা খেলার সুযোগ নেবেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ ইউরোপ এখন দুর্বল। আরও দুর্বল হচ্ছে ব্রিটেন। এতে রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ খুলে গেল। আর এই পথে কিভাবে হাঁটতে হবে-পুতিনের সেই কলা কৌশল রপ্ত করা আছে অনেক আগে থেকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুগটা অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাপ্রবাহের। সব ক্ষেত্রে এমনসব ঘটনা ঘটছে যেসবকে কোনো পূর্বাভাস দিয়ে মেলানো যাচ্ছে না। কেউ ভাবতেই পারেননি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ললাটে লেখা ছিল এমন সম্ভাব্য দুর্গতি। ব্রেক্সিটের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিগত ৪৩ বছরের সব হিসাব নিকাশ। টেবিল নড়ে উঠেছে পুঁজিবাদীদের। তাদের এখন বিশ্ববাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীতিতে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। সর্বোপরি এখন বিশ্বনেতাদের নতুন করে আকঁতে হবে আগামী দিনের রাজনীতির কলাকৌশল। এরই জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিল রাশিয়া।
বেক্সিটের মাধ্যমে একটা যুদ্ধ কিংবা রক্তপাতহীন অন্য রকম এক মহাযুদ্ধের ফসল ঘরে তুলতে যাচ্ছে তারা। সামনে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ওপরও নির্ভর করছে আরও কতোকিছু! কি জানি, পুতিন হয়তো তুমুল আলোচিত, বিতর্কিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান। আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটাও যদি আমেরিকার ইতিহাসে ঘটে যায় তাহলে আরও জমবে বেশ। যাকে হয়তো তুলনা করা যেতে পারে একটা মহাপ্রলয়ের সঙ্গে। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। রাশিয়া, আমেরিকা আর ব্রিটেন— ত্রি-মুখী রাজনীতির কূটচালে বিশ্বরাজনীতির চেহারাটাই হয়তো বদলে যাবে। আর পুতিন হয়তো এমন একটি স্বপ্নিল বিজয়ের অপেক্ষায় আছেন।
ব্রেক্সিট হয়তো পুতিনের সেই কাল্পনিক বিজয়েরই প্রাথমিক সূচনা। তাই তাঁর মুখে হাসি আসতেই পারে—বলছেন বিশ্লেষকরা। মস্কোয় একজন সাবেক মাকির্ন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফাউল ব্রিটেনের গণভোটের পর বলেছেন, ব্রেক্সিটের আসল বিজয়ী হচ্ছেন ভ্লাদিমিরি পুতিন। পুতিনের বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে একটা বড় বিজয় সূচিত হয়েছে।
পাশ্চাত্যের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ বলছেন, ব্রেক্সিট–এর ঘটনায় রাশিয়া শক্তির পথে এখন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। তাই বিজয়ের হাসি ফুটেছে ভ্লাদিমির পুতিনের মুখে। পুতিনই হচ্ছেন ব্রেক্সিটের সবচেয়ে বড় লাভবান ব্যক্তি।
কিভাবে পুতিন লাভবান হচ্ছেন, তারও একটা বিশ্লেষণ দেখা যাচ্ছে বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যমগুলোয়। বলা হচ্ছে, বেক্সিট নিয়ে ছিল পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সাপে-নেউল খেলা। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের থাকার পক্ষেই বিভিন্ন সময়ে প্রতিক্রিয়া জানালেও, ব্রিটেনকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে কলকাঠি তিনিই নেড়েছেন বেশি। পুতিন সবসময়ই সচেষ্ট ছিলেন ইউরোপীয় জোটকে দুর্বল করতে। এখন যুক্তরাজ্য ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ বজায় রাখার ক্ষেত্রে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের খবরদারি বন্ধ হবে। পাশাপাশি ইউরোপের সঙ্গে বাড়বে রাশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য। কারণ রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক বিধি নিষেধ আরোপের জন্য যুক্তরাজ্য ছিল প্রধান ক্রীড়ণকের ভূমিকায়।
মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেছেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার পথে কেউ আর এখন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ব্রিটেন ইউনিয়ন ছাড়ার কারণে ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক উন্নয়নেরও একটা নতুন দরজা খুলে গেছে। রাশিয়া এখন ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করবে।
রাশিয়ার একজন সিনিয়র কূটনীতিক বলেছেন, ইউরোপকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্য শুধু যে স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে তা নয়, বরং আমেরিকা থেকে ইউরোপের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে।