গ্রাম বাংলা ডেস্ক: নিজের লেখা ১৩তম বই ‘বাংলাদেশ : ইমার্জেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ (২০০৭-২০০৮)’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, জেনারেল মইন রাষ্ট্রপ্রধান হতে চেয়েছিলেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি আইনের আবরণে সেনা অভ্যুত্থানটি ছিলো সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে গুটিকয়েক উচ্চভিলাষী সেনা কর্মকর্তার ক্ষমতা গ্রহণের পরিকল্পনা। এর সাথে পুরো সেনাবাহিনী জড়িত ছিল না।
তিনি আরো বলেন, জেনারেল মইনের কোনো ব্যক্তিত্ব ছিলো না। তিনি একজন অদক্ষ অক্ষম ও দুর্নীতি পরায়ন ব্যক্তি ছিলেন। নিজস্ব কোনো চিন্তাধারা ও পরিকল্পনাও ছিল না তার। অন্যরা তাকে উৎসাহিত করেছে বিভিন্নভাবে।
তিনি বলেন, মইনউদ্দিন প্রথমে মাইনাস টু থিওরিতে গেলেন, পরে গেলেন প্লাস টু থিওরিতে, পরে মাইনাস ওয়ান থিওরিতে। এর ফলাফল হিসেবেই তারা বেগম জিয়াকে মাইনাস করেন। ফখরুদ্দিন ও মইনউদ্দিন বেগম জিয়ার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তারা কখনোই চান নি, বেগম জিয়া আবার ক্ষমতায় আসুক। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিকল্প ছিলো আওয়ামী লীগ।
বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও প্রধান অতিথি বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের অডিটরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বইটির উপর আলোচনা করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, প্রফেসর ড. মাহবুব উল্যাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ও নূরুল কবির, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জাতীয় প্রেস কাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইমাজেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ’ বইটির ইমার্জেন্সি শব্দটিতে আমার আপত্তি আছে। কারণ, ২০০৭-এর ১১ জানুয়ারি যা ঘটেছিলো তা ছিল সংবিধান বহির্ভূত। ইমার্জেন্সি জোর করে নেয়া হয়েছিলো রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। তিনি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেছিলেন বটে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন ব্যক্তি হিসেবে আমি বলবো- সেটা ছিলো পুরোপুরি একটা সামরিক অভ্যুত্থান (দেট ওয়াজ অ্যা ফুল স্কেল মিলিটারি টেকওভার)। এটা সামরিক অভ্যুত্থান এজন্য যে- সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে কাজগুলো হয়, সেই কাজগুলো তখনকার সরকার করেছিলো। ফখরুদ্দিনের সরকার থাকলেও সেখানে প্রকৃত নীতি নির্ধারক ছিলেন জেনারেল মইন উদ্দিন।
তিনি বলেন, এদেশে অতীতে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, পাকিস্তান আমলে হয়েছে, বিভিন্ন দেশে হয়েছে। তারা অভ্যুত্থানের পরপরই যে কাজটি প্রথম করেন তাহলো- রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করা। দ্বিতীয়ত, নেতাদের দুর্নীতির কথা ফলাও করে প্রচার করেন, যাতে জনমনে তাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা জন্মে। তৃতীয়ত, প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে টুকরো টুকরো করার এবং নতুন দল বা কিংস পার্টি গঠনের চেষ্টা করেন। এর সবকিছুই তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন করেছিলেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ১/১১ সরকারের ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই, সে কারণে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বইটি লিখে গেলাম।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে মুক্ত চিন্তার পরিবেশ সঙ্কুচিত হয়েছে। সত্য কথা বলা কঠিন হয়ে গেছে। এই বইয়ে যাদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাদের সবাই জীবিত। তাই তাদের নিয়ে কথা বলা খুব কঠিন কাজ। অনেক কথা অনেকের বিরুদ্ধে যেতে পারে, কিন্তু কারো প্রতি বিদ্বেষ নিয়ে আমি কখনোই লিখি না।
প্রফেসর মাহবুব উল্যাহর উপর হামলা
এদিকে বইয়ের প্রকাশনা উৎসব শেষে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের অডিটরিয়াম থেকে বের হয়ে বারান্দায় আসার পর ৫/৬ জন যুবকের একটি দল বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. মাহবুব উল্যাহর উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা তাকে কিলঘুষি মারে। ড. মাহবুব উল্যাহ চোখে আঘাত পান। তার শার্ট ছিড়ে যায় এবং একপর্যায়ে তিনি নিচে পড়ে যান। পরে এ সময় আশপাশে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়।
প্রফেসর মাহবুব উল্যাহ জানান, তিনি হামলাকারী কাউকে চিনতে পারেননি।