গাজীপুর অফিস: পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ৪টি বেসরকারী টেলিভিশনের ৪জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা গুরুতর।
সোমবার বিকাল ৫টার দিকে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
আহত ৪ সাংবাদিক হলেন, মোহনা টেলিভিশনের আতিকুর রহমান আমিন, আর টিভির আজহারুল হক, জিটিভির আব্দুল্লাহ আল মামুন ও একাত্তর টিভির ইকবাল আহমেদ সরকার। তাদের মধ্যে ইকবাল সরকার কম আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাজীপুরে ভাওয়ালের জঙ্গলে দীর্ঘদিন যাবৎ বেশ কিছু স্পটে অসামাজিক কর্মকান্ড জুয়া ও উলঙ্গ নৃত্য চলে আসছে। ঘটনাস্থলে একটি জুয়ার স্পট ছিল। ওই সাংবাদিকেরা জুয়ার ছবি তুলতে গেলে জুয়ার লোকজন তাদের মারপিট করে গুরুতর জখম করেন। সন্ত্রাসীরা তাদের ক্যামেরা ও অন্যান্য জিনিসপত্রও ছিনিয়ে নেয়। এসময় আহতদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাংবাদিকেরা জানান, পেশাগত কাজ করতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর চড়াও হয় ও অমানবিক ভাবে মারধর করেন। তারা লাঠি ও রড দিয়ে তাদের আঘাত করেন। আহতদের মধ্যে আরটিভির আজহার ও মোহনা টিভির আতিকের মাথায় প্রচন্ড আঘাত লেগেছে। জিটিভির মামুনের কানে আঘাতের কারণে শ্রবন শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে।
সংবাদ পেয়ে রাত সাড়ে ৮ টায় গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনর রশীদ হাসপাতালে আসেন ও আহতদের দেখে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়ে চলে যান।
বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, জুয়ার মাঠ গুলো থেকে জনৈক প্রভাবশীলী সাংবাদিক ৩২ জনের নামে দৈনিক চাঁদা উত্তোলন করতেন। বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগে আগত ওই সাংবাদিক কাউকে টাকা না দেয়ায় প্রতিদিন জুয়ার মাঠে সাংবাদিকদের ভীড় হত। কথিত রয়েছে, পুলিশ সুপারের আস্থাভাজন ওই সাংবাদিক কাউকে টাকা না দিয়ে নিজেই অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতেন। আর সাংবাদিকেরা তাকে কিছু বলতে না পেরে প্রতিদিন জুয়ার মাঠে গিয়ে জুয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধ করতেন। টাকা দিয়েও সাংবাদিকদের নিয়মিত আগমন হওয়ায় তা ঠেকাতে জুয়ারীরা ওই সন্ত্রাসী হামলা করে থাকতে পারেন বলে সূত্রের দাবি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ ৫ থেকে ৭ নং বিবাদীদেরকে গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে চলমান নগ্ননৃত্য, জুয়া, হাওজি ও মাদকের আসরগুলো বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এবং এগুলো কেন চলছে তা চার সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে জানানোর জন্য সকল বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
এছাড়া গাজীপুরের জুয়া বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে উচ্চ আদালত ৪ সপ্তাহের রুল জারী করেছে। গাজীপুর নাগরিক কমিটির সভাপতি জুলীয়াস চৌধুরীর করা রিট পিটিশন (5218/2016) এর প্রেক্ষিতে ০৬/০৬/২০১৬ খৃ: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের ৩নম্বর কোর্টের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি রাজ্জাক-আল-জামিলের সমম্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। গতকাল ১৯ জুন ২০১৬ খৃঃ রোববার এর পূর্ণাগ রায় বেরিয়েছে।
রীটে বিবাদী করা হয়েছে, ১) সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২) আই.জি, বাংলাদেশ পুলিশ ৩) জেলা প্রশাসক, গাজীপুর ৪) পুলিশ সুপার, গাজীপুর ৫) উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাজীপর সদর ৬) অফিসার ইনচার্জ, জয়দেবপুর থানা, গাজীপুর ৭) অফিসার ইনচার্জ, শ্রীপুর মডেল থানা, গাজীপুর
৮) মো. জসিম উদ্দিন, পিতা – মৃত মমিন উদ্দিন, গ্রামঃ খাইলকৈর – বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর থানা, গাজীপুরকে।