গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ১৩ বছর বয়সে লক্ষ্মীর (ছদ্মনাম) হেসেখেলে বেড়ানোর কথা। কিন্তু ওই বয়সে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। বৃদ্ধ ওই স্বামী বিয়ের রাতে তাকে ধর্ষণ করেন। কৈশোরের আলোকিত জীবনে পা দিতে না দিতেই লক্ষ্মী ডুবে যেতে থাকে অন্ধকারে।
তবে বেশি দিন এ দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি লক্ষ্মীকে। ইউনিসেফের সহায়তায় এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পায় সে। সংস্থাটির নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগ লক্ষ্মীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দুই বছর ধরে চিকিৎসা চলে তার।
এই গল্প ভারতের বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা লক্ষ্মীর একার নয়, তার মতো আরও হাজারো কিশোরীর। ইউনিসেফ বলছে, ভারতে প্রতি ৫০ জনে একজন মেয়েশিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ১০ বছর বয়স হতে না হতেই মেয়ে শিশুদের এ ধরনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। কৈশোর পার হতে না হতেই ৪২ শতাংশ মেয়েশিশু স্বামী, আত্মীয়, বন্ধু, পরিচিত, অপরিচিত এমনকি বাবা অথবা সৎ বাবার মাধ্যমে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়।
টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনে প্রকাশিত ইউনিসেফের প্রতিবেদন ‘হিডেন ইন প্লেইন সাইট’-এ ভারতে মেয়েশিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতের মেয়েশিশুদের ওপর জনসংখ্যা তাত্ত্বিক ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ভারতের ১০ থেকে ১৪ বছরের ১০ শতাংশ মেয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩০ শতাংশ মেয়ের যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কৈশোর পার হওয়ার আগেই ভারতের ৪২ শতাংশ মেয়েশিশুকে যৌন নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়।
ওই জরিপে উঠে এসেছে আরও ভয়ংকর সব তথ্য। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৭৭ শতাংশ কিশোরী জানায়, স্বামীরা তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। ৬ শতাংশ মেয়েশিশু জানায়, আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অনেকে তাদের যৌন নির্যাতন করেছে। কমপক্ষে ৪ শতাংশ মেয়েশিশু জানিয়েছে, বন্ধুরা যৌন নির্যাতন করেছে। ৩ শতাংশ মেয়েশিশু জানায়, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। আর শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বলেছে, বাবা অথবা সৎ বাবারা যৌন নির্যাতন চালিয়েছে তাদের ওপর। অর্থাৎ পরিচিত, অপরিচিত, আত্মীয়, বন্ধু কোনো পুরুষের কাছেই মেয়েরা নিরাপদ নয়।
ইউনিসেফের সাবেক পরামর্শক সুচিত্রা রাওয়ের ভাষ্য, এ ধরনের যৌন হয়রানির কথা মেয়েরা বেশির ভাগ গোপন করে যায়। যখন কেউ সাহস করে পুলিশকে জানায় অথবা আদালতের শরণাপন্ন হয়, তখনই যৌন নিপীড়ন বা নির্যাতনের খবর জানা যায়।
তবে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের পূর্বাঞ্চল, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় ভারতের মেয়েদের কিছুটা নিরাপদ বলে মনে করা হয়।