গ্রাম বাংলা ডেস্ক: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২০ দল আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, এখন থেকে কোন কিছুই আর বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হবে না। বিনা ভোটে নির্বাচিত এই অবৈধ সরকার চিরকাল ক্ষমতায় থাকতেই সংবিধান সংশোধন করছে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে আনার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০ দল এ কর্মসূচি পালন করে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, হঠাৎ কেন সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণের পক্ষ থেকে তো এ ধরনের দাবি ছিল না। আসলে বিনা ভোটে নির্বাচিত এই অবৈধ সরকার চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে সংবিধান সংশোধন করছে। এর মধ্যে দূরভিসন্ধি রয়েছে। তিনি বলেন, বিচারকদের ভয়ে রাখতেই অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাতে বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এখন কবরের শান্তি বিরাজ করছে। আর এই শান্তি ভোগ করছে মন্ত্রীরা। কিন্তু দেশের জনগণ অশান্তিতে আছে। হরতাল বন্ধ করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনি বলছেন, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধ হতে পারে। জনগণ তো আপনাকেই চায় না। যা মনে চায় তাই করেন। দেশের জনগণকে ছাগল-পাগল ভাববেন না। অবৈধ সরকারের কোন কিছুই বিনা চ্যালেঞ্জে ছাড়বে না বিএনপিÑএ মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, যা ইচ্ছা তাই করেন। আমরা বিনা চ্যালেঞ্জে কোন কিছুই ছাড়বো না। আইন করে সবকিছু বন্ধ করতে পারবেন না। জনগণ অধিকার আদায়ে আন্দোলন করবেই। জনগণের ভাষা বুঝে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা অহিংস আন্দোলন করবো। আমাদের অহিংস আন্দোলনে আপনারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করবেন না। জনগণের ভাষা বুঝে তত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিন। অবিলম্বে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে কেটে পড়–ন। না হলে জনগণ ক্ষমতা থেকে টেনে নামাবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপনের শুরুতেই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এই বিল উত্থাপনের সময় আইনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করেছিলেন। তার এই বক্তব্য সত্য নয়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল কায়েমের পর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে প্রেসিডেন্টের হাতে চলে যায়। সেই হিসাবে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটি তার হাতেই থাকার কথা ছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তা না করে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়ালের হাতে ন্যস্ত করেন। সরকারের ঘরে আগুন লেগেছে মন্তব্য করে রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজনই এখন তাদের দলের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ সরকার বিচার বিভাগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করছে। এখন পুরো নিয়ন্ত্রণের জন্য বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা এই অনিবার্চিত অবৈধ সংসদের হাতে নেয়ার পাঁয়তারা করছে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এম ওসমান ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল। শরিক দলের মধ্যে জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক তাসনীম আলম, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, সেলিম উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তজা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ডা. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, পিপলস লীগের চেয়ারম্যান এ্যাড. গরীবে নেওয়াজ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, মুসলীম লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. জুলফিকুর চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহম্মেদ, জমিয়তে উলামার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুহিউদ্দিন আকরাম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।