আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া সড়কের দৈর্ঘ্য ৪৭ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে আসা জাহাজের প্রথম চালানের পণ্য বন্দরে খালাসের পর এই সড়ক দিয়ে যাবে ত্রিপুরার আগরতলায়। নিয়মিত ট্রানজিট চালু হলেও এ সড়ককে পণ্য পরিবহন করার মতো উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। কয়েকটি স্থানে সরু ও ভাঙাচোরা এবং বেশ কয়েকটি সেতুর রেলিং ভেঙে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্থায়ী ট্রানজিটের জন্য আশুগঞ্জ নদীবন্দরের পাশাপাশি স্থলপথের পর্যাপ্ত অবকাঠামো উন্নয়ন করা খুবই জরুরি। তা না হলে নতুন ট্রানজিট পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কটি খুবই সরু। অনেক স্থান এত সরু যে, পাশাপাশি দুুটি গাড়ি চলাচল করা কঠিন। কিছু জায়গায় বাঁক থাকলেও নেই কোনো স্পিডব্রেকার। পথে-পথে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও ভেঙে গেছে সড়ক। ভেঙে পড়েছে সেতুর দুই পাশের রেলিং। এসব কারণে ওই সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ট্রানজিটের পণ্য যখন পুরোদমে চলাচল শুরু হবে, ঝুঁকির মাত্রা তখন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আশুগঞ্জ-আখাউড়া স্থলপথে বর্তমানে দৈনিক গড়ে একশ’ থেকে দেড়শ’ ট্রাক চলাচল করে।
আশুগঞ্জ বন্দর থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের এক অংশ হওয়ায় এখানকার অবকাঠামো মোটামুটি ভালো। তবে বিশ্বরোড থেকে সুলতানপুর হয়ে আগরতলা সীমান্ত পর্যন্ত বাকি ৩৬ কিলোমিটার রাস্তার অবকাঠামো দুর্বল। ৩৬ কিলোমিটার পথে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি বাঁক থাকলেও কোনো স্পিডব্রেকার নেই। ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য ওই সব স্পট খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমন একটি জায়গার নাম ছিনাই গ্রামের আলাকপুর। এই স্পটে কোনো স্পিডব্রেকার নেই। এই গ্রামের অটোরিকশাচালক খায়রুল জানান, সন্ধ্যার পর গাড়ি চালাতে খুবই অসুবিধা হয়। আখাউড়া উপশহরের সনি্নকটে কড্ডার মোড় রেলক্রসিংয়ে কোনো লাইনম্যান নেই। ফলে যে কোনো সময় এখানে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রানজিটের জন্য এই সড়ক মোটেই উপযুক্ত নয়। ট্রানজিটের মালপত্র পরিবহনের জন্য আরও প্রশস্ত রাস্তা দরকার। আশুগুঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের ট্রাকচালক মো. মিজান জানান, রাস্তায় বাঁক থাকায় রাতে চলাচল করতে অসুবিধা হয়। রাস্তা সরু হওয়ায় অনেক সময় গাড়ি থামিয়ে অন্য গাড়ি চলাচলের সুযোগ দিতে হয়। এ কারণে কখনও কখনও যানজটের সৃষ্টি হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আমির হোসেন বলেন, এখন কিছু সমস্যা হলেও চার লেনে উন্নীত করা হলে এ সমস্যা থাকবে না।
এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দরের ইয়ার্ডে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, শেড ও লোকবল নেই। এই বন্দরের অবকাঠামো দুর্বল। আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটির দৈর্ঘ্য ৪৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশ। সরাইল থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের কিছু অংশ খানাখন্দে ভরা। এই সড়কের ব্রিজ ও কালভার্টগুলো পুরনো এবং ঝুকিপূর্ণ। আখাউড়া স্থলবন্দর-সুলতানপুর সড়কের পূর্বপাড়ায় ব্রিজ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ব্রিজটির দু’পাশের রেলিং ভেঙে গেছে। আর কড্ডা এলাকার ব্রিজের মাঝখানে গর্ত। জাজির খালের ওপর নির্মিত টানা ব্রিজটি নড়বড়ে। তাছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দর-সুলতানপুর সড়কটির কয়েকটি জায়গা ভাঙাচোরা ও পূর্ব-পশ্চিমে লম্বালম্বি সড়কটির উত্তর দিকে দেবে গেছে। নারায়ণপুর এলাকায় কিছু অংশ প্রতি বছরই দেবে যায়। সড়কটি মেরামত করা হচ্ছে না। এ সড়কের সুলতানপুর থেকে চিনাইর পর্যন্ত কয়েকটি বাঁক রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বাঁক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিপরীত দিকে থেকে আসা যানবাহন দেখা যায় না। ফলে ওই বাঁকে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে।