সংসদ লবিতে বাবলুর চোখ তোলার হুমকি দিলেন প্রতিমন্ত্রী রাঙা

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

jp01_375192668

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: সদ্য দলের সভাপতিমণ্ডলীর পদ হারিয়ে নিজ দলের সিনিয়র এমপিদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এবং তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার অধিবেশনের মাগরিবের বিরতির সময় বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের লবিতে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

রাঙ্গা-তাজুলের বিপক্ষে ছিলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। এদিন অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

অধিবেশনের শুরুতেই যোগ দেন এরশাদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন বাবলু। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রেসিডিয়াম থেকে অব্যাহতি পাওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলামও তাদের পেছনের সারিতে নিজেদের আসনে বসেন। তবে রাঙ্গা ও তাজুলের সঙ্গে এরশাদের কোনো কথা হয়নি, কেউ কারও দিকে তাকাননি। তবে মাগরিবের নামাজের বিরতির সময় বিরোধী দলের লবিতে (১ নম্বর) বাবলুর সঙ্গে রাঙ্গা-তাজুলের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাপার একাধিক নেতা।

বিরতির সময় এরশাদ ও ব্যারিস্টার আনিস লবিতে ছিলেন না। এ সময় বাবলুকে উদ্দেশ্য করে রাঙ্গা বলেন ‘আপনি তো এখন অনেক বড় নেতা হয়ে গেছেন, উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। যখন তখন যে কাউকে দল থেকে বের করে দিচ্ছেন, অব্যাহতি দিচ্ছেন। আপনি আমার এলাকার কমিটি ভেঙে দিলেন, এগুলো করছেন কেন?’

জবাবে বাবলু বলেন, ‘আমি কিছু জানি না’। রাঙ্গা বলেন, ‘আপনিই তো সবকিছু করছেন’।

জিয়াউদ্দিন বাবলুর উদ্দেশে এ সময় মশিউর রহমান রাঙ্গা আরও বলেন,  দল চলে আমার টাকায়। আমার ওপর খরবদারি, চোখ তুলে ফেলবো!

এ নিয়ে দুজনের মধ্যে প্রায় হাতাহাতির উপক্রম হলে অন্য সদস্যরা এসে তাদের থামান।

এরপরেই উত্তেজিত কণ্ঠে বাবলুকে রাঙ্গা গালাগাল করে বলেন, রংপুরে আমি দল চালাই, আমার টাকায় দল চলে, আর সেখানে নাকি আমার ছবি পোড়ানো হচ্ছে, আমিও এরশাদের একশ ছবি পোড়াবো।’

জাতীয় পার্টির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ সময় রাঙ্গার সমর্থনে উচ্চস্বরে কথা বলেন তাজুলও। তিনি বাবলুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,  ‘আপনি আজ প্রেস কনফারেন্সে আমাকে যুদ্ধাপরাধী বলেছেন, আমি সাতবারের এমপি, কেউ কখনও কোনো অভিযোগ করতে পারেনি, আপনি এসব মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছেন কেন? বিরোধী দলের উপনেতা হতে না পেরে আপনি এসব করছেন, উপনেতা হতে চাইলে আপনি আমাদের বলতেন, আপনি তো বলেননি।’

বাবলুর সঙ্গে রাঙ্গা-তাজুলের হাতাহাতির উপক্রম হলে দলের কয়েকজন সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে এনিয়ে এরশাদ তার সংসদ ভবন অফিসে ব্যারিস্টার আনিস ও বাবলুসহ কয়েকজনকে নিয়ে কথা বলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। তার ব্রিফিংয়ের সময় এরশাদ নিজ অফিসে থাকলেও তিনি সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। অফিস থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকরা তার বক্তব্য জানতে চাইলেও তিনি এড়িয়ে যান।

চলমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জাপা মহাসচিব বাবলুও এরশাদের ভাষায় বলেন, আমাদের দলে কোনো সংকট নেই। জাপা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। গণমাধ্যমে গত ক’দিন ধরে জাপাকে নিয়ে যেভাবে লেখালেখি হচ্ছে সেটিই এর প্রমাণ।

দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে আপনারা সবাই বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে যান। তাহলে কি জাপার নিয়ন্ত্রণও প্রধানমন্ত্রীর হাতে? এরকম এক প্রশ্নের জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র ও রীতিনীতিতে প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতা সংসদে থাকা সব দলেরই নেতা কিংবা অভিভাবক। কারণ তিনি লিডার অব দ্যা হাউজ, সে হিসেবে তিনি আমাদেরও নেতা বা বিরোধী দলেরও নেতা।’

জাপা একটি স্বতন্ত্র দল বলেও এ সময় দাবি করেন তিনি।

মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলামকে কেন বহিস্কার করা হয়েছে, এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য দলীয় চেয়ারম্যান এই ব্যবস্থা নিয়েছেন। দলের গঠনতন্ত্রে তাকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। এনিয়ে তিনি একমাত্র দলের কাউন্সিলে জবাবদিহি করতে বাধ্য, এছাড়া অন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে তিনি বাধ্য নন।

এ প্রসঙ্গে জাপা মহাসচিব আরও বলেন, তাজুল ইসলাম এর আগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে এরশাদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, একবার পিডিপিতে গেছেন, মোট চারবার তিনি দল ছেড়ে যান। গঠনতন্ত্রের সেই ৩৯ ধারার ক্ষমতাবলেই এরশাদ তাকে আবার দলে ফিরিয়ে নেন। তখন তো তাজুল চেয়ারম্যানের এই এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। কাজেই এখন এরশাদের দুনিয়া ছোট হয়ে আসছে বলা তাজুলের ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। বুধবার গণমাধ্যমে দেওয়া তাজুলের পুরো বক্তব্য এরশাদের নজরে এসেছে, তিনি তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন। তাছাড়া তাজুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে বলেও আমরা শুনেছি, তিনি একজন বিতর্কিত লোক।

আপনি নিজেই নাকি বিরোধী দলের উপনেতা হতে চান? এর জবাবে জাপা মহাসচিব বলেন, আমি পার্টির মহাসচিব। এটিই অনেক বড় পাওয়া। আমার তো আর কিছু হওয়ার দরকার নেই। বিরোধী দলীয় উপনেতা হওয়ার আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।

বাবলু বলেন, ৩১ আগস্টের পর দলের পার্লামেন্টারি পার্টির আর কোনো বৈঠক হয়নি। সেখানে উপনেতার বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি। যেহেতু বিরোধী দলীয় নেতা একজনকে উপনেতা করার জন্য স্পিকারকে একটি চিঠি দিয়েছেন, সে কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করতে চলের চেয়ারম্যান হিসেবে এরশাদও স্পিকারকে চিঠি দেন।

তাহলে কি বিরোধী দলীয় নেতা নিজেও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সে বিষয়টি দেখার এখতিয়ার দলের চেয়ারম্যানের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *