স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, গাজীপুর থেকে ফিরে: জিসিসির প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়রের চেয়ারে বসার পর কাকের ভীড় পড়েছিল। মেয়রের রুমে কোন নাগরিক গেলে কথাই বলা কষ্টকর ছিল। কারণ মেয়র অফিসে যাওয়ার পর থেকে একদল চাটুকার মেয়রের সামনে বসে থাকতেন। বিএনপি -আওয়ামীলীগের কতিপয় নেতা ও কাউন্সিলরদের মুখরোচক প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন মেয়র। এমনও দেখা গেছে, কোন নাগরিকের কোন প্রয়োজন পড়লে মেয়রের মুখ থেকে কথা বের হওয়ার আগেই তোষামোদীরা উত্তর দিয়ে দিতেন। মেয়রের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে না পেরে নগর ভবনে সাধারণ মানুষের যাতায়াত কমে গিয়েছিল। তবে উপচে পড়া ভীড়ের অধিকাংশই ছিলেন তোষামোদকারীরা।
রাজনীতিতে রাজপথে বিরোধী দলে থাকা বিএনপির নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান জিসিসির মেয়র হয়ে যে টুকু উল্লাসিত হয়েছিলেন তার থেকে বেশী ছিলেন আতঙ্কিত। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ কখন তাকে সরিয়ে দেয় এই ভয় থাকত সব সময়। আর এই ভয় থেকে মুক্ত থাকতে তিনি আওয়ামীলীগকে প্রধান্য দিতেন বেশী। এতে বিএনপির লোকজন অনেক সংক্ষুব্ধ থাকতেন। ফলে এম এ মান্নান মেয়র থাকাকালীন সময়েই বিএনপি ও আওয়ামীলীগের মধ্যে নগর ভবন কেন্দ্রিক একটি চাপা উত্তেজনা ছিল।
জিসিসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এম এ মান্নান মেয়র থাকাকালীন সময়ে অধিকাংশ সূযোগ সুবিধা পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। পদ টিকিয়ে রাখতে তিনি আতঙ্কিত থাকায় সব সময় ব্যালেন্স করে রাখতেন। বিএনপির লোকজনকে গুরুত্বও দিতেন কম। এতে বিএনপির কাউন্সিলরগণ অনেকাংশেই অসন্তোষ্ট ছিলেন। এই ক্ষোভ থেকে ষড়যন্ত্রেরও জন্ম হয়ে থাকতে পারে।
যার ফলে পরিবর্তিত সমযে অধ্যাপক মান্নান ছিটকে পড়লে আওয়ামীলীগ সমর্থিত কাউন্সিলরদের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিতদের খুব সহজেই সন্ধি হয়ে যায়। এর সংঙ্গে আবার যুক্ত হয় বিএনপিতে হাসান ও মান্নান গ্রুপের কোন্দল। মান্নানকে সরাতে ও মান্নানকে সরিয়ে দিতে আওয়ামীলীগের চেয়ে হাসান পন্থী বিএনপির কাউন্সিলররা বেশী উৎসাহী ছিলেন। ফলে জিসিসিতে মান্নান হটাও আন্দোলনের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের চেয়ে হাসান পন্থী বিএনপির ভূূমিকা ছিল চোখে পড়ার মত।
বর্তমান অবস্থা দেখলে মনে হয়, অধ্যাপক এম এ মান্নান মেয়রের চেয়ারে বসার সময় অসংখ্য কাক মেয়রকে পাহাড়া দিতো। কাকের কারণে মেয়র নিজে না খেয়ে কাকের ভোগ জোগাতেও ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। আজ এম এ মান্নান কারাগারে থাকায় মেয়রের চেয়ারে আসীন আসাদুর রহমান কিরণ। চেয়ারের লোক পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু কাকের কোন পরিবর্তন নেই। তবে কাক যাবে যখন ভাত থাকবে না। কারারুদ্ধ এম এ মান্নান এখন চিৎকার করে কাক খুঁজলেও পাবেন না কারণ ভাত নেই। একই অবস্থা হবে কিরণের। যখন কিরণের হাতে ভাত থাকবে না।