আগাম ঘোষণা দিয়ে ১০ জুন থেকে দেশজুড়ে সপ্তাহব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়। ঢালঢোল পিটিয়ে শুরু হওয়া এ অভিযান আজ শুক্রবার ভোরে শেষ হয়েছে। চলমান অভিযানে গত রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৭৮ জনকে। পুলিশের দাবি অনুযায়ী তাদের মধ্যে ১৭৬ জন জঙ্গি। এবারের অভিযানে দুর্ধর্ষ কোনো জঙ্গিকে গ্রেফতার করা যায়নি। এমনকি গত ১৮ মাসে উগ্রপন্থিদের ৪৭টি হামলায় যে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন, তাতে জড়িত কাউকে গ্রেফতারের কথাও পুলিশ জানাতে পারেনি। এবারের ‘জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান’ নিয়ে
নানা প্রশ্ন ওঠে। প্রথমত, আগাম ঘোষণা নিয়ে এমন প্রক্রিয়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের নজির নেই বললেই চলে। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে গিয়ে অন্যান্য মামলায় ১২ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ আছে, অনেক এলাকা থেকে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অনেকে থানা বা পুলিশের হেফাজত থেকে ‘উধাও’ হয়ে গেছে। এমনকি অনেককে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। ঈদের আগে সাঁড়াশি অভিযানে কোনো কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ‘বাণিজ্য’ করার অভিযোগ উঠেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনার কারণে এবারের অভিযানে ৫৪ ধারার লাগামহীন প্রয়োগ না থাকলেও গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত পুরনো আসামির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছয় হাজার ২৬ জনই পরোয়ানাভুক্ত আসামি। এদিকে, ঘোষিত জঙ্গিবিরোধী অভিযান আজ শেষ হলেও উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে নজরদারি যথারীতি চলবে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রাতে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অনেক ওয়ারেন্ট তামিল হয়নি। অভিযানে অনেক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি, সন্ত্রাসী, মলম ও অজ্ঞান পার্টির সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। তাই গ্রেফতারের সংখ্যাটি বড় দেখায়। রোজায় সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে রয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে আটক করা হচ্ছে না। অভিযানের ৭৫ ভাগ সফলতা এসেছে। ছোটখাটো যেসব অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. জিয়া রহমান বলেন, জঙ্গি ধরতে গিয়ে এত সংখ্যক লোককে আটক করা মোটেই যৌক্তিক নয়। পুলিশ তার স্বাভাবিক কার্যক্রমের মধ্যেও উগ্রপন্থিদের ধরতে পারত। এ অভিযানে জঙ্গি দমনে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, সপ্তাহব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের অনেক সফলতা রয়েছে। জঙ্গি গ্রেফতারের পাশাপাশি উগ্রপন্থিদের মধ্যে ভীতিও তৈরি হয়েছে। তবে আপাতত এ অভিযানের মেয়াদ আর বাড়ছে বলে মনে হয় না।
গত ৫ জুন চট্টগ্রামে খুন হন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এর পর গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সদর দপ্তরে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের নেতৃত্বে সভা হয়। সেখান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়, শুক্রবার থেকে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু হবে। তবে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যার পর থেকে দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ১৩ জন। তাদের মধ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন পাঁচজন। বাকিরা ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে দাবি করছে পুলিশ।
জঙ্গিবিরোধী অভিযান সম্পর্কে জানতে গত বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। ‘এত বেশি সংখ্যক’ গ্রেফতার নিয়েও প্রশ্ন ছিল তার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে ৬৩০টি থানা রয়েছে। প্রতিটি থানায় যদি গড়ে ২০ জনও গ্রেফতার হয়, তাহলে সংখ্যা অনেক বেশি হয়।’ গত বুধবার থেকে পুলিশ সদর দপ্তর সারাদেশে মোট গ্রেফতারের সংখ্যা তাদের বিজ্ঞপ্তিতে জানাচ্ছে না। কেবল জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা প্রকাশ করছে। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ষষ্ঠ দিনে গতকাল ১০ সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি শুরু থেকে দাবি করছে, ‘বিরোধী দলকে দমন-নিপীড়ন করতে এ অভিযান চালানো হয়। ঈদের আগে পুলিশকে বাণিজ্য করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’ তবে পুলিশ এ ধরনের অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করছে।
অনেক অভিযোগ :সরকারবিরোধী পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার খোকসার কলেজছাত্র জাহিদুল ইসলাম আটকের পর ১০ হাজার টাকা দাবি করেন এসআই আনোয়ারুল ইসলাম। টাকা না দেওয়ায় তাকে চালান দেওয়া হয়। তার বাবা সফিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থক। আমার ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী। পুলিশের অভিযোগ মিথ্যা। খোকসা থানার ওসি কাজী দাউদ হোসেন সমকালকে বলেন, জাহিদুল নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত। সে একসময় মাদ্রাসায় পড়ত। টাকা চাওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই।
সাতকানিয়া থেকে নুরুন্নবী নামের একজনকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ওই টাকা পরিশোধ করলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘৫৫ বছর বয়সী নুরুন্নবীকে থানায় ডেকে আনা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাপস দাস নিয়ে যান। টাকা নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা।’ নাটোরে মিলন হোসেন নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন নলডাঙ্গা থানার এএসআই মালেক। আটকের বিষয়টি জানার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধও করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি সমকালকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বেশি গ্রেফতার হয়েছে যে জেলায় :পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে বগুড়া জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে। গত সাত দিনে ওই জেলা থেকে জেএমবির ২৩ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরই রাজশাহী জেলা থেকে ১০ জেএমবি সদস্য ছাড়াও ওই জেলা থেকে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) সাত জঙ্গিকেও গ্রেফতার করা হয়। নওগাঁ জেলা থেকেও জেএমবির ১১ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। সাঁড়াশি অভিযানে গত সাত দিনে পুলিশ ১৭৬ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গি সদস্য বেশি। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের মধ্যে ১৩৭ জন জেএমবি সদস্য। এ ছাড়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) ১১ জন, হিযবুত তাহরীরের ১০ জন, নিষিদ্ধ (জেএমজেবি) সাতজন, হরকাতুল জিহাদের দু’জন এবং আল্লাহর দলের পাঁচজন জঙ্গি সদস্য রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অপর চারজন অন্যান্য উগ্রপন্থি সংগঠনের।
সপ্তাহব্যাপী অভিযান :অভিযান শুরু হওয়ার প্রথম ২৪ ঘণ্টায় গত শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে তিন হাজার ১৯২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে সন্দেহভাজন জঙ্গি ছিল মাত্র ৩৭ জন। ওই সময়ের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে ১ হাজার ৮৬১ জন, নিয়মিত মামলায় ৯১৭ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন এবং মাদক মামলায় ৩৫৮ জন রয়েছেন। অভিযানের দ্বিতীয় দিন সারাদেশে ৪৮ জঙ্গিসহ দুই হাজার ১৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেফতার হওয়া অপর ২ হাজার ৮৪ জনের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে ১ হাজার ৪৯৬ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৪১ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ৩৯১ জন্য এবং অন্যান্য অপরাধে আরও ১৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানের তৃতীয় দিন ৩৪ জঙ্গিসহ তিন হাজার ২৪৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে ২ হাজার ৫৭৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ১৯ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ১৬০ এবং অন্যান্য মামলায় ৪৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চতুর্থ দিন ২৬ জঙ্গিসহ তিন হাজার ১১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে দুই হাজার ৩৬৮ জন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ৩৮ জন, মাদক উদ্ধার মামলায় ২৯৫ জন এবং অন্যান্য মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পঞ্চম দিন ২১ জন সন্দেহভাজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে অন্যান্য দিনের মতো ওই দিন অন্য আসামিদের গ্রেফতারের তথ্য তারা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করেনি। অবশ্য সমকাল ব্যুরো, অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেখা যায়, পঞ্চম দিনে পুলিশ ১৬টি জেলা থেকে ২১ জঙ্গি ছাড়াও বিভিন্ন মামলায় জামায়াত-শিবির এবং গ্রেফতারি পরোয়ানা মূলে অন্তত ৬৯৪ জনকে গ্রেফতার করে। ষষ্ঠ দিন সারাদেশে থেকে ১০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে শেরপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও বরগুনা থেকে একজন করে জেএমবির সাত সদস্য এবং নওগাঁ থেকে দুই সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। একই অভিযানে রাজধানী ঢাকা থেকে হিযবুত তাহরীরের এক সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হয়রানির অভিযোগ :রংপুর বিভাগের চার জেলায় ১ হাজার ২৭৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেএমবির ১২ ও জামায়াত-শিবিরের ১৮ এবং বিএনপির তিনজন রয়েছেন। অভিযানের নামে নিরীহ মানুষকে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে। পীরগাছার হামিদ মিয়ার অভিযোগ, তার ছেলে রাকিব মিয়াকে কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি তাদের গ্রেফতার না করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রংপুরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আবদুুল্লাহ আল ফারুক জানান, অভিযানে জেএমবি সদস্যসহ অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের নামে কোনো সাধারণ মানুষকে হয়রানি বা কোনো ধরনের বাণিজ্য হয়নি।
সিলেটে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার মাত্র একজন :সিলেটে চলমান অভিযানে মাত্র একজন উগ্রপন্থিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সাঁড়াশি অভিযানে সিলেট বিভাগের চার জেলা ও এক মহানগর থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে চলতি অভিযানে সাধারণ নিরীহ মানুষকে হয়রানির বেশ কিছু অভিযোগ উঠলেও অনেকেই পুলিশি হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ। মৌলভীবাজারের মাতারকাপন এলাকা থেকে শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি মেস থেকে ৮-১০ জনকে আটক করলেও পরবর্তী সময়ে মাত্র একজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
চট্টগ্রামে একজন জঙ্গিও ধরা পড়েনি :চট্টগ্রামে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার এক হাজার ৭৭৭ জনের দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নগরী ও জেলায় এক হাজার ১৬১ জন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে একজন জঙ্গিও ধরা পড়েনি। বিশেষ এ অভিযানে ধরা পড়েনি তালিকাভুক্ত কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসীও। সাঁড়াশি অভিযানে নগরী ও জেলায় একজন জঙ্গিও ধরতে না পারায় অভিযান নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। অভিযান শুরুর পর সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘কোয়ালিটি অ্যারেস্টের’ পক্ষে। গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। আসল অপরাধীদের ধরার জন্যই সিএমপি কাজ করছে। আমরা জঙ্গি ধরার চেষ্টা করেছিলাম তবে পারিনি।
বগুড়ায় জঙ্গি দমনে সফলতা নেই :জঙ্গি দমনে পুলিশের বিশেষ অভিযানে তেমন সফলতা আসেনি উত্তরের চার জেলা বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও জয়পুরহাটে। অতীতের মতো এবারও বগুড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। বগুড়ায় বুধবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৭৫ জনকে। তাদের মধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে মাত্র ১৭৪ জনকে। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতার করা অনেক আসামিকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, গ্রেফতার করা আসামিদের অনেকে আদালত থেকে জামিন নেওয়ার কারণে তাদের কারাগারে পাঠানো সম্ভব হয়নি।
১৫ জেএমবির আটজন কারাগারে যায়নি :অভিযানে পুলিশ ৬০৫ জনকে আটক করলেও কারাগারে গেছে ৩০৪ জন। তাদের ১৫ জন জেএমবি সদস্যকে আটকের কথা পুলিশ স্বীকার করলেও কারাগারে পাঠানো হয়েছে মাত্র সাতজনকে। জেএমবির অন্য সদস্যরা কোথায় তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ সাঁড়াশি অভিযানের নামে বাণিজ্য করছে।’ তিনি বলেন, ১৪ জুন নগরীর বিহারি কলোনি থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ ৬ যুবককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর রাতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিসের স্বার্থে তাদের ছাড়া হলো?
তবে এসব বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজ উদ্দিন বলেন, ‘মাথা গুনে আসামির সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে না। কারণ অনেকেই জামিনে ছাড়া পেয়ে যান।’ জেলা পুলিশ সুপার নিশারুল আরিফ বলেন, ‘জেএমবি সদস্যদের কারাগারে যাওয়ার কথা। তারা কেন কারাগারে গেল না তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’