ঢাকা : মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ ওষুধ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জারি করা হাইকোর্টের রুল ১৮ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ বুধবার (১৫ জুন) এ আদেশ দেন।
আদালতে আবেদনকারী ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও নূরুল ইসলাম সুজন। এমএসটি ফার্মা’র পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আজমালুল হোসেন কিউসি ও মনজিল মোরসেদ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আপিল বিভাগের এ রায়ের ফলে হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রয়েছে। একইসঙ্গে হাইকোর্টের জারি করা রুল আগামী ১৮ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত।
গত ৭ জুন ওই ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। সাতদিনের মধ্যে উৎপাদন বন্ধ করে দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালককে বলেন আদালত। একইসঙ্গে ১৪টি ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়েটিক উৎপাদন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়াও আদালত রুল জারি করেন।
এসব কোম্পানির উৎপাদন বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং লাইসেন্স বাতিলে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, র্যাবের মহাপরিচালক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড ও এমএসটি ফার্মা’র পক্ষে এ আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন জানানো হয়। চেম্বার বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দারের আদালত গত সোমবার (১৩ জুন) শুনানি শেষে এ আবেদনে নো অর্ডার দিয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন এবং বুধবার শুনানির দিন ধার্য করেন।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত ৫ জুন রিট আবেদনটি দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরসেদ জানান, ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এ কমিটিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মো. সাহাবুদ্দিন কবীর চৌধুরী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী।
এ বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি দেশের ৮৪টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন শেষে একটি প্রতিবেদন গত ১ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটির কাছে জমা দেন। যাতে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হওয়া ২০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা