১৪-দলীয় জোটে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) অবস্থান নিয়ে অন্ধকারে আওয়ামী লীগের নেতারা। জাসদ নিয়ে হঠাৎ দলের সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের পেছনের কারণ খুঁজছেন দলটির নেতারা। এই বক্তব্য দলের, না ব্যক্তিগত, এ ব্যাপারে কোনো ধারণাও করতে পারছেন না তাঁরা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো বক্তব্য না দেওয়া পর্যন্ত জাসদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান ধোঁয়াশাই থাকবে বলে তাঁদের ধারণা।
তবে ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের কয়েকজন নেতা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্য দরকার। তখন এ ধরনের বক্তব্য জোটে অনৈক্য তৈরি করবে, যা সুবিধাবাদীদের সুযোগ করে দেবে।
গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ বলেন, জাসদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারক ও বাহকের শতভাগ ভণ্ড। সরকারে জাসদের একজনকে মন্ত্রী করার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জাসদই বঙ্গবন্ধুকে হত্যাক্ষেত্র তৈরি করেছিল বলেও অভিযোগ করেন সৈয়দ আশরাফ।
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিআরটিএ-এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘জাসদ নিয়ে তাঁর দল বা সরকারের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের সাধারণ সম্পাদকের এটি ব্যক্তিগত মতামত। তাই এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেলিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের মুখপাত্র ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া বা সেই বক্তব্য বিশ্লেষণ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়া শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
জাসদ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক। এই দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরকারের তথ্যমন্ত্রী। তা ছাড়া এর আগে ১৯৯৬ জাসদের আরেক অংশের নেতা আ স ম রবকে মন্ত্রী করে আওয়ামী লীগ।
গত বছর আগস্টে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম বলেন, জাসদই বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। স্বাধীনতাবিরোধীরা কখনো বঙ্গবন্ধুর ওপর আঘাত হানতে পারত না, যদি গণবাহিনী ও জাসদ বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে, মানুষ হত্যা করে, এমপি মেরে পরিবেশ সৃষ্টি না করত।
সে সময় আরও কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ৪০ বছর আগে জাসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই বিতর্ক ওঠার ১০ মাস পর আবারও এই বিতর্ক সামনে আনলেন স্বয়ং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। প্রথমবার বিতর্ক শুরু হলে ওই সময় আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কথা বললেও চুপ ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। তাই এবার নিজেই বিষয়টি সামনে আনায় দলটির নেতারা মনে করছেন, এর পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে।
আজ মঙ্গলবার সংসদে আসা আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাংসদ বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের এই বক্তব্যের পর তাঁদের সঙ্গে অন্য বিষয় নিয়ে আশরাফের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু বক্তব্যের ব্যাপারে তাঁরা জানতে চাননি। আশরাফও এ নিয়ে কথা বলেননি।
বিভেদ চায় না জাসদ ও অন্য শরিকেরা: আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাবেশে জাসদের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ যখন সম্পন্ন কাজ করছি, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে তথ্যমন্ত্রী যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, তখন এই ধরনের কাদা-ছোড়াছুড়ি আমাদের ঐক্য বিনষ্ট করবে; মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে দুর্বল করবে।’
জাসদ আরেক অংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফের হঠাৎ এমন বক্তব্য শুনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। তিনি যা বলেছেন, তা সত্য নয়, বিভ্রান্তিকর। তাঁর বক্তব্যে সত্যকে আড়াল করা হয়েছে।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাসদের মতপার্থক্য থাকতে পারে, আমাদেরও আছে। মতপার্থক্য মেনে নিয়েই জোট করা হয়েছে। যখন গুপ্তহত্যা চলছে, জঙ্গিবাদের তৎপরতা চলছে, সেই সময় ঐক্য আরও বাড়া দরকার। সৈয়দ আশরাফের এই সময় জাসদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই, এটা সময়োচিত হয়নি।’