গ্রাম বাংলা ডেস্ক: জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির নেতারা বলেছেন, মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তারা বলেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। কিন্তু যত ষড়যন্ত্রই হোক বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সপ্তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, অধ্যাপক ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, ড. পিয়াস করিম, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে- জাগপার শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল লতিফ নেজামী, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বেগম সেলিমা রহমান, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আব্দুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, নূরী আরা সাফা, আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ সহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সভা পরিচালনা করেন বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সরকার নেই। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের উত্থান ঘটে। তাই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে এ স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি বলেন, মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর বিএনপির সংগঠন শক্তিশালী হবে। এমন শক্তিশালী হবে যেন বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে সরকার আটকাতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া কোটি কোটি মানুষের জাতীয় নেত্রী। তাকে অনুসরন করার মত আদর্শ রয়েছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়া বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন। আমাদেরকে জিয়ার আদর্শকে টিকিয়ে রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার দেশে ব্যাপক পুলিশ নিয়োগ দিয়েছে। শুনতে পাচ্ছি, আরো পঞ্চাশ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে। বিএনপি আন্দোলন দমাতে পঞ্চাশ হাজার পুলিশ নিয়োগ দিলে আমরাও ৫ লক্ষ কর্মী বাড়াবো।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাকে রাজপথে আগামী দিনে ১০০ লোক নিয়ে বসতে অনুমতি দেন। তাহলে দেখা যাবে আপনার বুকে কতো সাহস। সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক পূনর্গঠন চলছে জানিয়ে ভবিষ্যত আন্দোলনের জন্য ‘সংগ্রামের প্রস্তুতি’ নিতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতেই বিএনপি আন্দোলন করছে। আন্দোলন মানে যুদ্ধ বিগ্রহ নয়। শান্তিপূর্নভাবে আন্দোলনেই দাবি আদায় করতে হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সারাদেশের মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের ফেরাতে সংগ্রাম করছেন, অন্যদিকে আরেকজন (শেখ হাসিনা) অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এজন্য তাকে অনেক অনাচার-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। ১/১১-এর অবৈধ সরকার তাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছে। ভয়ভীতিসহ তার দুই ছেলেকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এরপরও তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল থেকেছেন, কিন্তু দেশের বাইরে যাননি। খালেদা জিয়া দেশের বাইরে যাননি বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময়ে দেশে আসতে পেরেছিলেন বলে দাবি করেন মির্জা আব্বাস।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে বিচারপতি অভিশংসন আইন করেছে। কিন্তু কোনোভাবেই বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেবনা। দেশের আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ।
রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সারাদেশ একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। এই কারাগারকে ভাঙতে হবে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের হাজার হাজার নেতার্কমীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। সরকার হামলা মামলা করে রাজনীতি থেকে দূরে সড়াতে চায়। তা কোনো দিন সফল হবে না।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারকে হটাতে আন্দোলনের বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের জয় সুনিশ্চত। পরাজয়ের কোন কারণ নেই। এজন্য সবাইকে রাজপথে নামতে হবে।
শফিক রেহমান বলেন, আওয়ামী লীগ অবৈধ সরকার গঠন করেছে। এখন তাদের বিরুদ্ধে যে কেউ কথা বললে তাকে পাকিস্তানি বলা হচ্ছে। কিন্তু যারা এখন ক্ষমতায় তারা বাংলাদেশী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়। কারণ একাত্তর সালে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব হারিয়েছিল বলেই সামরিক অফিসার ও সাধারণ মানুষকেই মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। ক্ষমতাসীন সরকারের সব ধরণের চক্রান্ত রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান তিনি।
পিয়াস করিম বলেন, দেশের ষোল কোটি মানুষ আজ কারাবন্দি। তাদের মুক্ত করে গোটা দেশকে মুক্তি দিতে হবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে পেশাজীবী সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।