পটুয়াখালী: সংখ্যালঘু (হিন্দু) সম্প্রদায়ের এক মা ও মেয়েকে জোর করে ট্রলারে তুলে নিয়ে নদীতে ঘুরে ঘুরে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।
শনিবার রাতে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে মা মেয়ের চিৎকারে আশপাশের জেলেরা তাদের উদ্ধার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এ ঘটনায় রোববার দুপুরে নির্যাতিতার স্বামী পরিতোষ চন্দ্র বর্ধন বাদী হয়ে বাউফল থানায় মামলা করেছেন। পরিতোষ পেশায় একজন দর্জি।
এদিকে, মামলা দায়েরের পর পুলিশ নূর আলম নামে স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নাজিরপুর ইউনিয়নের (রামনগর তাঁতেরকাঠী) এক নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
নির্যাতনের শিকার ওই মা ও মেয়ে বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ইউপির উত্তর কাছিপাড়া গ্রামের বর্ধন বাড়ির বাসিন্দা।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম খান ফারুকীর উপস্থিতিতে ঘটনার শিকার মা সাংবাদিকদের জানান, শনিবার (১১ জুন) বেলা সাড়ে ১০টার দিকে তিনি (৩৪) তার কলেজপড়ুয়া মেয়েকে (১৭) নিয়ে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে একই উপজেলার কালাইয়া ইউপির শৌলা নুরজাহান গার্ডেনে ঘুরতে যান। সেখানে বিকেল পর্যন্ত মা-মেয়ে মিলে অবস্থান করেন। সন্ধ্যার দিকে একই ভাবে ভাড়ার মোটরসাইকেলে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
নির্যাতিতা মা আরো জানান, মোটরসাইকেল চালক তাদের বাড়ির পথে না নিয়ে পার্শ্ববর্তী তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ে নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। সে সময় কোথা থেকে ৬ জন লোক সেখানে এসে মা মেয়েকে জোর করে ট্রলারে তুলে নদীর মাঝখানে নিয়ে যায়। এসময় মাকে ট্রলারের মধ্যে ও মেয়েকে ট্রলারের উপরে উঠিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। এভাবে নির্যাতন চলতে থাকে রাত ১১টা পর্যন্ত। এসময় মা মেয়ে চিৎকার করতে থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শী মমিনপুর এলাকার জেলে সুমন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, তিনি ওই সময় কেশবপুর ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নদীর চর ঈশান এলাকায় মাছ ধরছিলেন। রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তিনি একটি মেয়ের ডাক-চিৎকার শুনতে পান। তখন ২০ থেকে ২৫ জন জেলে একত্রিত হয়ে ওই ট্রলারটি ঘেরাও করে। এতে ট্রলার থেকে কয়েকজন ব্যক্তি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর তারা ওই ট্রলার থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে। ট্রলার থেকে জেলেরা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নুর আলমকে আটক করে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
অভিযুক্ত নূর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ধর্ষণ করি নাই। অন্যরা এর সঙ্গে জড়িত। আমাকে ট্রলারের মেশিন সারানোর জন্য নেয়া হয়েছিল। সোহেল (৩২), রহিম মীর (৩৫), হারুন মৃধা- এরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত।’ জড়িতদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাইলে নূর আলম বলেন, ‘তারা সবাই যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী।’
দলীয় সূত্রমতে, ঘটনায় জড়িত সোহেল নাজিরপুর ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী ওই ইউনিয়নের রামনগর তাতেরকাঠী গ্রামের আমির হোসেন হাওলাদালের ছেলে, রহিম মীর একই ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আর হারুন মৃধা ওই ওয়ার্ডের যুবলীগকর্মী।
ওসি আজম খান ফারুকী বলেন, ‘খবর পেয়ে মা-মেয়েকে তেঁতুলিয়া নদীর ভরিপাশা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই সময় আটক করা হয় নূর আলমকে। পাশাবিক নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েকে বাউফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আগামীকাল সোমবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতে ১৬১ধারায় মা মেয়ের জবানবন্দি নেয়া হবে।’