চট্রগ্রাম: স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের পর এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেননি বাবুল আক্তার। তবে দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। আর দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকার থেকেই শিগগির এই চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র জানিয়েছেন, এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর বাবুল আক্তার ইতিমধ্যে ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিলেও ফের তাঁকে চট্টগ্রাম মহানগরে পাঠানো হতে পারে। এতে বাবুল আক্তারেরও সায় রয়েছে বলে জানা গেছে। কারণ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে যোগ দেওয়ার পর তিনি তাঁর স্ত্রীর হত্যা মামলার তদন্তেও সহায়তা করতে পারবেন।
ঢাকায় পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দেওয়ার আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন বাবুল আক্তার। চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময় জঙ্গি ও ইয়াবাবিরোধী একাধিক অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এ কারণে ফের তাঁকে চট্টগ্রামেই পোস্টিং দেওয়ার পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে তাঁকে সেখানে বদলির বিষয়েও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
বদলি করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর মতামতও জানতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাবুল আক্তারও সায় দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে যোগ দিলে তাঁর স্ত্রী হত্যার তদন্তের দিকেও নজর দিতে পারবেন। তিনি চৌকস অফিসার, হত্যাকারীরা যে আবরণেই থাকুক না কেন, তিনি তাদের ধরতে সহযোগিতা করতে পারবেন। এ ছাড়া যে গোষ্ঠী নেপথ্যে থেকে তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছে তাদেরও তিনি চিহ্নিত করতে পারবেন। এসব বিবেচনায় তাঁকে (বাবুল আক্তার) চট্টগ্রাম সিএমপিতে ডিসি হিসেবে পোস্টিং দেওয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম এলাকায় দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে বাবুল আক্তার যেমন সেখানকার পথঘাট চেনেন, তেমনি অপরাধীদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কেও তাঁর ভালো ধারণা আছে। টানা অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম এলাকার জঙ্গি নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন বাবুল আক্তার। কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি এএসপি থেকে অতিরিক্ত এসপি পদে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে দক্ষিণ সুদান যান। গত বছরের আগস্টে দেশে ফেরার পর থেকে সিএমপিতে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। গত এপ্রিলে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পান তিনি। পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিতে এ মাসের শুরুতে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। দুই সন্তানসহ তাঁর স্ত্রী মিতু ছিলেন চট্টগ্রামের বাসায়। গত রবিবার ভোরে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ের ওআর নিজাম রোডে দুর্বৃত্তরা মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে।