পুরো এলাকায় ছিল ‘ব্যাকআপ ফোর্স’

Slider জাতীয়

 

b_216461

 

 

 

 

 

চট্টগ্রামে এসপিপত্নী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার সময় ওই এলাকায় খুনিদের সাহায্য করতে একাধিক ‘ব্যাকআপ ফোর্স’ ছিল। খুনের পর মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়াসহ পুরো ঘটনার সময় জিইসি এবং এর আশপাশের এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা নজরদারি করছিল। এদিকে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদের একটি মাজার থেকে আবু নসর গুন্নু নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে শিবিরের সাবেক নেতা বলে দাবি করলেও ঘটনার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা স্পষ্ট করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে গতকাল বুধবার রাত ৯টার দিকে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালকসহ সেই কালো মাইক্রোবাসটি আটক করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার সমকালকে বলেন, ‘আজ নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘গতকাল সকালে হাটহাজারীর দরবারে মুসাবিয়া মাজার থেকে নসরকে গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে তার কাছ থেকে খুনের ব্যাপারে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করা হবে। আমাদের কাছে তার সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য আছে।’ নসর হাটহাজারীর ফরহাদাবাদ এলাকার করিম মুহুরীবাড়ির মৃত হাজি মফজল আহমেদের ছেলে। নসর কিছুদিন আগে দেশে ফিরে একটি মাজারের কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবদাস। তিনি বলেন, নসর একসময় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও পরে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

পুরো এলাকায় ছিল একাধিক ব্যাকআপ ফোর্স :এক মিনিটের মধ্যে খুন করে তিন খুনিকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করার জন্য ওই এলাকায় ছিল একাধিক ব্যাকআপ ফোর্স। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘মিতু কখন বের হবেন, মোটরসাইকেলে করে যারা পালাবে তাদের ব্যাকআপের জন্য একটা গ্রুপ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আশপাশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এ চক্রের আরও অনেকেই ছিল।’ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা যখন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করছিল, তখন জিইসি মোড়ের দিকে কিছুটা অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল কালো মাইক্রোবাসটি। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যাওয়ার ১০ সেকেন্ডের মাথায় ঘটনাস্থলে আসে ওই মাইক্রোবাসটি। পাঁচ সেকেন্ডের মতো ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে চলা শুরু করে মাইক্রোবাসটি। পরে এটি গোলপাহাড় মোড়ের দিকে চলে যায় এবং দু’বার গোলপাহাড় মোড় ইউটার্ন করে চলে যায় বহদ্দারহাটে। সেখান থেকে শুলকবহর হয়ে বাদুরতলায় যায়। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, খুনিরা মোটরসাইকেল ফেলে এই মাইক্রোবাসেই পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় ওই এলাকার রাস্তায় থাকা পথচারীদের গতিবিধি যাচাই-বাছাই করছেন গোয়েন্দারা।

নসরকে নিয়ে নানা প্রশ্ন : অনুসন্ধানে জানা যায়, আবু নসর গুন্নু ১৯৮৭ সালে নাজিরহাট আহমদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ১৯৯৬ সালে বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের মাধ্যমে তিনি কুয়েতে যান। পাঁচ বছর সেখানে থেকে দেশে ফেরেন। এরপর আবার কুয়েতে গিয়ে সাত বছর থাকেন। বিদেশ থেকে ফিরে ডেকোরেটরের ব্যবসা করেন। ফরহাদাবাদ বাজারে আনন্দ ডেকোরেশনস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তার। এক বছর আগে ব্যবসায় থেকে মনোযোগ দেন মাজার সংস্কৃতিতে। শেখ মুসা আহমুদুল হক সিদ্দিকীর দরবারে মুসাবিয়ার মাজারের ওয়ারিশ শামসুন্নুরুন মনির সিদ্দিকার পক্ষের কমিটির সম্পাদক নসর। এলাকাবাসী জানায়, ৭ মে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইদ্রিস মিয়া তালুকদারের পক্ষে সক্রিয় প্রচারে মাঠে ছিলেন নসর। এ ছাড়া স্থানীয় নাজিরহাট কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই দফায় নির্বাচিত অভিভাবক প্রতিনিধি নসর।

আবু তাহের  বলেন, ‘আমার ভাই কখনও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না।’ শামসুন্নুরুন মনির সিদ্দিকা বলেন, ‘আমার ছোট বোন হামিদুন্নেসা সিদ্দিকা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নসরের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড থানায় অপহরণের মিথ্যা মামলা করেছিল। নসর একজন নিরীহ লোক। তাকে কেন পুলিশ নিয়ে গেল বুঝতে পারলাম না।’ আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস মিয়া তালুকদার বলেন, নসর তার দলের একজন সক্রিয় কর্মী। এসপির স্ত্রী খুনের সঙ্গে তার জড়িত থাকার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছি। তবে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের দাবি, এ খুনের সঙ্গে নসরের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। তাই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উদ্ধার হয়নি মিতুর মোবাইল :চার দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত মিতুর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। কললিস্ট দেখে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মোবাইলটি সর্বশেষ নগরীর বাদুরতলা এলাকার বড় গ্যারেজ এলাকায় বন্ধ হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস বলেন, ‘ওই এলাকা থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার হলেও মোবাইলটি পাওয়া যায়নি।’

তদন্তকারী সংস্থাগুলো জানায়, খুনের সময় বাবুল আক্তারের ছেলে মাহির দৌড়ে বাসার সামনে চলে আসে। সেখানে এক পথচারী মাহিরের বুকে লাগানো আইডি কার্ডে থাকা মিতুর ফোন নম্বরে ফোন দেন। নগরীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওই পথচারী ভেবেছিলেন, মাহির হয়তো পথে তার মাকে হারিয়ে ফেলেছে। তিনি মিতুর মোবাইলে ফোন দিতেই অপর প্রান্তে একজন কলটি রিসিভ করেছিল। তিনি দু’বার হ্যালো বললেও অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এর পরপরই মোবাইলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে মাহিরের স্কুলবাস আগে আসার ব্যাপারে ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হয়েছিল বলে কয়েকজন প্রতিবেশী জানালেও সিএমপি দাবি করেছে, এমন কোনো ক্ষুদেবার্তা মোবাইলে আসেনি। তবে তদন্তকারী এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হতে পারে এবং এ ব্যাপারটি ধামাচাপা দিতেই হয়তো খুনিরা মোবাইলটি নিয়ে যায়। তবে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘আমরা ব্যাপারটি খতিয়ে দেখছি। সবকিছু নিশ্চিত হয়েই আমরা গণমাধ্যমকে তথ্য দিতে পারব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *