কুমিল্লা : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর ডিএনএ পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পৌঁছেছে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের হাতে।
মঙ্গলবার বেলা ১২টা ২০ মিনিটে প্রতিবেদনটি নিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে যান পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। সিআইডি’র দুই সদস্যের নাম এএসআই মোশারফ হোসেন ও কনস্টেবল শাহ আলম।
ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী ফারুক সিআইড প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতিবেদনটি দুপুর সাড়ে ১২টায় গ্রহণ করেন। এসময় ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা ও ডা. শারমিন সুলতানা শাম্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সোমবার রাতে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ থেকে ওই প্রতিবেদন কুমিল্লায় পাঠানো হয়।
ডিএনএর পুরো প্রতিবেদন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডকে দেয়ার জন্য ৫ জুন রোববার সিআইডিকে আদেশ দেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জুন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক জয়নাব বেগম এ আদেশ দেন। গত বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে এ আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএর সাতটি পরীক্ষার প্রতিবেদন মেডিকেল বোর্ডকে দেয়ার কথা সিআইডি’র।
এর আগে গত ২৯ মে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মুস্তাইন বিল্লা নিহত তনুর দাঁত ও সোয়াবের ডিএনএ প্রতিবেদন চিকিৎসকদের সরবরাহ করা নির্দেশ নিয়েছিলেন।
আদালতের নির্দেশে গত ৩০ মার্চ কবর থেকে তনুর মরদেহ উত্তোলন করে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয় এবং আদালতের নির্দেশেই তনুর পরিহিত কাপড়চোপরসহ ৭টি বিষয়ের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা বাদল বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আদালত সবগুলো ডিএনএ প্রতিবেদন সরবরাহের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির ডিএনএ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম আদালতে বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে এ আবেদন জানান। সূত্র জানায়, তনুর বিভিন্ন বিষয়ের উপর যে ডিএনএ প্রতিবেদন তৈরি করা হয় সেগুলো থেকে দাঁত ও সোয়াবের ডিএনএ প্রতিবেদন প্রদান করা কষ্টসাধ্য। একটির প্রতিবেদন আরেকটির সাথে সম্পর্কিত এ কারণে সবগুলো বিষয়ের উপর ডিএনএ প্রতিবেদন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে প্রদানের আবেদন জানানো হয়। আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে।
সূত্র জানায়, নিহত তনুর দাঁত ও সোয়াবের পরীক্ষায় ডিএনএ পাওয়া যায় নি। তবে তার কাপড়ে তিনজন পুরুষের শুক্রানু পাওয়া যায়। সে শুক্রানু থেকে তিনজন পুরুষের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। যেহেতু তনুর মরদেহ ধোয়া-মোছা হয়েছে এবং প্রথম ময়নাতদন্ত করার ১০ দিন পর আবার কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে সে ক্ষেত্রে অনেক প্রমাণ ধুয়েমুছে গেছে। কিন্তু কাপড়েরগুলো থেকে গেছে।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা রোববার রাতে জানান, ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর তনুর মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রদান সম্ভব হবে।
এর আগে ডা. কামদা প্রসাদ সাহা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছিলেন ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার দুই কার্য দিবসের মধ্যে তনুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, গত ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে কলেজছাত্রী তনুর লাশ পাওয়া যায়। পরদিন ২১ মার্চ লাশের প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। এতে মৃত্যুর কারণ ও ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয়া হয়। পরে ৩০ মার্চ আদালতের আদেশে তনুর লাশ কবর থেকে তোলা হয়। ওইদিনই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের গঠিত মেডিকেল বোর্ড দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে। সেই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো প্রকাশের অপেক্ষায়।