রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের কাজে হতাশ উচ্চ আদালত!

Slider বাংলার আদালত

 

2016_06_07_01_59_19_2dbe3vlZKEs3auWGZj3fFZmEGNjH3n_original

 

 

 

 

ঢাকা : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মামলায় ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের (প্রসিকিউটর) কাজে হাতাশা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।

সোমবার দুপুরে মীর কাসেম আলীর ২৪৪ পৃষ্ঠার প্রকাশিত রায়ে এ হাতাশা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ। এই মামলার অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘প্রসিকিউশনের পক্ষে দুই প্রসিকিউটর মামলাটি পরিচালনা করেন। তারা যৌথভাবে মামলাটি পরিচালনা করলেও সেটা খণ্ডিতভাবে শুনানি করেছেন। তারা দুজন একসাথে কখনো কাজ করেননি। তাদের একজন যেদিন শুনানি করেছেন অপরজন সেদিন আসেননি। আবার অপরজন যেদিন শুনানি করেছেন সেদিন আরেকজন আসেননি।’

রায়ে এও বলা হয়েছে, ‘দু’জন প্রসিসিকিউটর এই মামলাটি পরিচালনা করেছেন এটা দোষের কিছু নয়। বরং একাধিক প্রসিকিউটর দ্বারা একটি মামলা পরিচালনা করা ভালো। তবে একাধিক প্রসিকিউটর একটি মামলায় যৌথভাবে যুক্ত থাকলে তাদের মধ্যে পরামর্শ, আলোচনা ও সমন্বয় থাকতে হবে। ওই দু’জন প্রসিকিউটরের এই মামলাটি যৌথভাবে পরিচালনা না করাটা একটি ভুল। তাছাড়া প্রসিকিউশনের মধ্যে যারা দক্ষ ছিলেন এ ধরনের মামলা পরিচালনা করতে তাদেরকেও এখানে নিয়োগ করা হয়নি।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ বলেন, ‘একজন প্রসিকিউটর কিছু সাক্ষী উপস্থাপন করেছেন, আরেকজন প্রসিকিউটর অন্য সাক্ষী উপস্থাপন করেছেন। এতে তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব তৈরি হয়েছে। মামলা পরিচালনাকারী দু’জন প্রসিকিউটর সাক্ষ্য ও জেরার সময় একসঙ্গে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আমরা এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, দুই প্রসিকিউটরের মধ্যে মামলা পরিচালনায় কোনো সমন্বয় ছিল না।’

‘অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, সরকার এ ধরনের মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে খুবই অভিজ্ঞ ও দক্ষ দু’জন প্রসিকিউটরকে নিয়োগ দিয়েছেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তারা এই মামলা পরিচালনায় নেই,’ বলা হয় রায়ে।

আপিল বিভাগ তার রায়ে আরো উল্লেখ করেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল তার শুনানিতে বলেছেন যে, মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছেন। তবে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে কি হয়নি সেটা বিচার্য বিষয় নয়। অ্যাটর্নি জেনারেল লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার বিষয়ে একটি রশিদ দাখিল করেন। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় আসামি খুবই বিত্তশালী ব্যক্তি।’

বলা হয়, ‘২০১২ সালের ১৯ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির দাখিল করা জামিনের আবেদনে তার অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ দিয়েছেন। যেখানে অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। এসব কিছুই প্রমাণ করে, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করতে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন।’

রায়ে আরো বলা হয়, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি (মীর কাসেম আলী) চট্টগ্রাম অঞ্চলের শুধু একটি দলের সংগঠকই ছিলেন না, বরং তিনি সেই দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন এবং সাধারণ মানুষদের ওপর বর্বরতামূলক কাজ পরিচালনা করেছেন। মীর কাসেম ছিলেন সেই সময়ের (১৯৭১) ভয়ানক অপরাধীদের মধ্যে একজন এবং খুনী দলের প্রধান।’

প্রসঙ্গত, এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাসহ আপিল মামলার রায় প্রদানকারী পাঁচ বিচারপতি রায়ে স্বাক্ষরের পর তা প্রকাশিত হয় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *