পুলিশ পরিবারে বাড়তি সতর্কতা

Slider জাতীয়

 

17323_f8

 

 

 

 

একের পর এক ‘টার্গেট কিলিং’ চলছেই। সর্বশেষ খোদ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। এর পরপরই জঙ্গি ঠেকাতে মরিয়া অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগে থেকেই জঙ্গি নিধনে জিরো টলারেন্স থাকলেও এবার আঁটসাঁট বেঁধে মাঠে নামতে যাচ্ছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। গত দুদিনে পুলিশ সদর দপ্তরে এসব বিষয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। সকল গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। একই সঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটকে দ্রুত মাঠে নামানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন তারাই পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বৈঠকে জঙ্গি হামলা ঠেকানোর সম্ভাব্য সকল কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো মূল্যে জঙ্গি নিধনে বদ্ধপরিকর বলে জানান তিনি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে টার্গেট করে হত্যার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার জন্য তাৎক্ষণিক বার্তা পাঠানো হয়। মিতুর ওপর জঙ্গি হামলা হয়েছে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরপরই পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠক করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকালও সকাল ১১টা থেকে দুপুর প্রায় ২টা পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইজি থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জঙ্গি হামলা ঠেকানোর নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে জঙ্গি বিরোধী অভিযানে যেসব পুলিশ কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ কর্মকর্তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্বজনদের ওপর হামলার ঘটনা এর আগে কোনো দিন ঘটেনি। এটি করা হয়েছে মূলত পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভেঙে দিতে।

অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে ‘সফট টার্গেট’। পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা চুপসে যায়। কিন্তু তা কোনোভাবেই হতে দেয়া হবে না। জঙ্গিবিরোধী জোরালো অভিযানের জন্য কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইজিপি দেশে আসলেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে লিখিত সার্কুলার জারি করা হবে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সবসময় একজন অস্ত্রধারী বডিগার্ড থাকে। জঙ্গি নিয়ে কাজ করেন বা জঙ্গি হামলার শিকার হতে পারেন এমন কর্মকর্তাদের পরিবারের জন্যও একজন করে বডিগার্ড দেয়া যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত কার্যকর হতে পারে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানী ঢাকায় জঙ্গি হামলা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছে বেশি। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারিও করা হয় বেশি। এ কারণে জঙ্গিরাও কৌশল পাল্টিয়ে সারা দেশে নিভৃত এলাকায় আস্তানা গেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি গোষ্ঠীদের অভায়রণ্য হয়ে উঠেছে। জঙ্গি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমন একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকারও করেছেন যে, রাজধানীতে বেশি নজর দিতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলে একেবারেই নজরদারি করা হয়নি। আর আগে জঙ্গিবিরোধী বিশেষায়িত কোনও ইউনিটও ছিল না। সাধারণ পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তারা জঙ্গিদের কৌশল বুঝতে পারেন না। ফলে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গিরা বেশ ভালোভাবেই সংগঠিত হতে পেরেছে। তারাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে টার্গেট কিলিং করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে দুই ধারার জঙ্গি সংগঠিত হয়েছে। একটি হলো আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সমর্থক আর অপর গ্রুপ হলো ইসলামিক স্টেটের সমর্থক। দুই গ্রুপই টার্গেট কিলিংয়ে ‘স্লিপার সেল’ বা ‘কাট আউট’ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। গত কয়েক বছরে বিদেশি নাগরিক, ব্লগার, লেখক-প্রকাশক, অধ্যাপক, ভিন্নমতালম্বী বা ভিন্ন ধর্মালম্বীদের এরাই টার্গেট করে হত্যা করেছে। বিভিন্ন ঘটনার পর যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য আদায় করা যাচ্ছে না। নেপথ্য মদদদাতা ও বর্তমান সময়ের শীর্ষ নেতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছেন। পুলিশ সূত্র জানায়, সারা দেশেই বর্তমান প্রেক্ষিতে জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোনো জঙ্গি গ্রুপ যাতে কোনোভাবেই সংগঠিত হতে না পারে সেজন্য সকল গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সমন্বয় করে অভিযান চালানো হবে। প্রয়োজনে ‘স্ট্রিং অপারেশন’ বা ‘আন্ডার কাভার’ অপারেশন করা হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যে কোনো মূল্যে দেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করা হবে। এখন আর বসে থাকার সময় নেই।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জঙ্গিবিরোধী সেলের সঙ্গে যারা কাজ করছেন তাদের নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে তার একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এসব পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাথমিকভাবে সকল কর্মকর্তাদের নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের সতর্ক হয়ে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য একজন করে অস্ত্রধারী বডিগার্ড দেয়া যায় কি না তাও ভাবা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বিষয়টিতে সায় দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সফট টার্গেটে আঘাত করা জঙ্গিদের নতুন কৌশল। এটি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলে পুলিশ কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙে যেতে পারে। ফলে বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মতো দ্বিতীয় ঘটনা ঘটার সুযোগ দেয়া যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *