এক ফকির ও তার খাদেম হত্যা এবং বোমায় ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার দুটি ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে জেএমবির একটি আস্তানার সন্ধান পান বাবুল আক্তার। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ জেএমবি চট্টগ্রামের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গত অক্টোবরে পুলিশের সঙ্গে এক অভিযানে থাকা অবস্থায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন জাবেদ। এসব কারণে বাবুল আক্তার ও তার পরিবার হুমকি পেয়ে আসছিলেন বলে চট্টগ্রামের পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মোক্তার আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু বাবুল আক্তার জঙ্গি দমনে অনেক কাজ করেছেন, তারাই পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। তবে সব সম্ভাবনাই আমরা খতিয়ে দেখব।’
নতুন কর্মস্থলে দু-একদিনের মধ্যে যোগদানের কথা ছিল বাবুল আক্তারের। সেজন্য গতকাল তিনি ঢাকায় ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ তাকে কষ্ট দিলেও দুর্বল করতে পারেনি। গতকাল বাসায় গিয়ে দেখা গেল, তিনি দুই সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযানে একাধিকবার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন বাবুল আক্তার। ২০০৮ সালে তিনি র্যাব থেকে সিএমপির কোতোয়ালি জোনের এসি হিসেবে বদলি হন। চট্টগ্রামে যোগদানের বছরই কোতোয়ালি থানার টাইগারপাস এলাকায় এক ছিনতাইকারীকে জীবনের ঝুঁঁকি নিয়ে অস্ত্রসহ জাপটে ধরে আলোচনায় আসেন তিনি। ২০০৫ সালে র্যাবে থাকাকালে কিশোরগঞ্জের সিক্স মার্ডার মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন বাবুল। হাটহাজারীর সার্কেল এএসপি হিসেবে যোগ দিয়ে উত্তর চট্টগ্রামে একের পর এক অভিযান চালিয়ে ডাকাতদের ত্রাসখ্যাত ওসমান ওরফে কিলার ওসমানকে তিনি গ্রেফতার করেন।
হাটহাজারী ও কক্সবাজারে দায়িত্ব পালন শেষে ফের সিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি হিসেবে যোগ দেন বাবুল আক্তার। যোগ দিয়েই প্রত্যক্ষদর্শী এক বোবা ভিক্ষুকের সহায়তায় আগ্রাবাদে ডাবল মার্ডারের রহস্য উদ্ঘাটন করেন। গ্রেফতার করেন ওই হত্যার সঙ্গে জড়িতদের। রিয়াজউদ্দিন বাজারে পাইকারি ব্যবসার আড়ালে গড়ে ওঠা অবৈধ স্বর্ণের গুদামও চিহ্নি?ত করেছিলেন তিনি।
গত বছর নগরীর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকার একটি ভবনের নিচতলায় জেএমবি আস্তানায় অভিযান চালান বাবুল আক্তার। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল জঙ্গিরা। এর পরও সেখান থেকে গ্রেফতার করেন জাবেদসহ পাঁচ জঙ্গিকে। এ অভিযানের মাধ্যমে বাবুল আক্তার সাম্প্রতিককালে সংঘটিত দুটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডেরও রহস্য উদ্ঘাটন করেন। ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর হাটহাজারীর আমান বাজারের একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে জেএমবি নেতা ফারদিনের বাসা থেকে বিপুল বিস্ফোরক ও অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার করেন তিনি।
২০০৫ সালে পুলিশে যোগ দিয়ে অপরাধ দমনে সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে পান রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সেবা)। ২০০৯ সালে পেয়েছেন পিপিএম (সাহসিকতা) পদক। ২০১০ সালে পেয়েছেন আইজিপি ব্যাজ। ২০১১ সালে পেয়েছেন পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাশীল পুরস্কার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (সাহসিকতা)। বেসরকারি পর্যায়ে ২০১২ সালে সিঙ্গার-চ্যানেল আই (সাহসিকতা) পুরস্কার লাভ করেন বাবুল আক্তার। আর চট্টগ্রাম রেঞ্জে চারবার অর্জন করেছেন সেরা সহকারী পুলিশ সুপারের মর্যাদা।