বড় স্বপ্ন কঠিন বাস্তবতা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
untitled-6_216080
উইলিয়াম শেকসপিয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকের বিখ্যাত একটি উক্তি ‘আই মাস্ট বি ত্রুক্রয়েল অনলি টু বি কাইন্ড’, অর্থাৎ ‘দয়ালু হতেই আমাকে অবশ্যই নির্দয় হতে হবে’। কিছু কঠোর নীতি-সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত দেশের জন্য ভালো হবে_ এমন যুক্তি দেখাতে গিয়ে ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি তার এক বাজেট বক্তব্যে এ উক্তির আশ্রয় নিয়েছিলেন। আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্ভবত সেই পথেই হাঁটলেন। নতুন বাজেট প্রস্তাবে জনগণের ওপর কর ও ভ্যাটের চাপ বাড়িয়ে দিলেন।

রাজস্ব আয় অনেক বেশি বাড়াতে মুহিতের এ কঠোর অবস্থান দেশের উন্নয়নের জন্যই। তার স্বপ্ন অনেক বড়। বাস্তব পরিস্থিতি অনেক কঠিন। আগের বাজেটে ঘোষিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অর্জন অনেক পিছিয়ে। আরেক কঠিন বাস্তবতা হলো, বেসরকারি বিনিয়োগে তেমন গতি নেই। কর্মসংস্থান পরিস্থিতি দুর্বল। বিশ্ব অর্থনীতিতে দুর্বলতা রয়েছে, যা আমাদের রফতানির জন্য শুভ বার্তা নয়। সার্বিক বিবেচনায় তিনি উচ্চাভিলাষী বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবেন কি-না সেটিই আগামীর জন্য বড় প্রশ্ন হয়ে থাকবে।

অর্থমন্ত্রী নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন আগামী ১ জুলাই থেকে। ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আরও এক বছর সময় নিলেন। আইন কার্যকর পিছিয়ে দিলেও তিনি ভ্যাট

আদায় বাড়াতে চান চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ শতাংশ বেশি। সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চান ৩৭ শতাংশ। এনবিআরকে আদায় বাড়াতে হবে ৩৫ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী নিজেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন। তবে তা আদায় সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের দুই মেয়াদে টানা আটটি বাজেট দিলেন মুহিত, যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য যে বাজেট উপস্থাপন করলেন, তাতে তিনি প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মাধ্যমে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। আয়ের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উত্তরণকালে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সচরাচর অসমতা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ক্রমবর্ধমান প্রগতিশীল করনীতির পাশাপাশি সমাজের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর অনুকূলে নানা ধরনের সহায়তা আয় বণ্টনে ভূমিকা রাখছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বাজেট পেশ করলেন, তাতে তিনি ব্যয় করতে চান তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হবে অত্যন্ত দুষ্কর। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এডিপির যে আকার ধরা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন সম্ভব নয়। অতএব, লক্ষ্যমাত্রা ও অর্জনের মধ্যে বড় যে পার্থক্য কয়েক বছর ধরে হচ্ছে, আগামী অর্থবছরেও তার ব্যতিক্রম দেখছেন না মির্জ্জা আজিজ। অবশ্য অর্থমন্ত্রী এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জনে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আয় বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, সারা বিশ্বে কর-জিডিপির অনুপাত বাংলাদেশে অত্যন্ত নিম্নস্তরে। বর্তমানে যা জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এ হার ২০ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বছরে এটি ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হবে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা। দেশে করদাতার সংখ্যা লজ্জাকর। সরকারের লক্ষ্য, বর্তমানের ১২ লাখ করদাতাকে আগামী বছরে ১৫ লাখে উন্নীত করা।

সরকারের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী বিএনপি বাজেটকে অতি উচ্চাভিলাষী আখ্যা দিয়ে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলেছে। অর্থনীতিবিদরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজেটের বাস্তবায়নকেই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। এফবিসিসিআইসহ বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে। কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কর ও ভ্যাটের চাপ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন। আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাব বলেছে, তাদের কোনো প্রস্তাব বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। অর্থমন্ত্রী আজ বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নের জবাব দেবেন।

সরকার ও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এবারও বাজেট উপস্থাপনে অর্থমন্ত্রী ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। এর আগে সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন করা হয়। সংসদে এমপিদের আলোচনা শেষে আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য শেষে আগামী সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত সংসদের বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া।

কোথায় কঠোর হলেন মুহিত :রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক খাত যখন টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, তখন অর্থমন্ত্রী রফতানির ওপর উৎসে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন দ্বিগুণেরও বেশি। লোকসানি কোম্পানির টার্নওভার কর দুই থেকে তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাড়তি কর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সংবাদপত্র শিল্পের দুর্দিনেও কোনো সুখবর দিতে পারেননি তিনি। বরং সংবাদপত্রে ক্লাসিফায়েড বিজ্ঞাপনের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করেছেন। মোটা দাগে নানান সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি প্রত্যাহার করেছেন। কম হারে ভ্যাট দেওয়ার সুবিধাও কমিয়েছেন ব্যাপকভাবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্যাকেজ ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হলেও ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়াননি অর্থমন্ত্রী। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলক ভ্যাটের আওতায় আনার ঘোষণা এসেছে। ভ্যাটের চাপ শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ওপর পড়ে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যেতে পারে। বেতন-ভাতা খাতে উৎসে কর আদায় বাড়ানোসহ বাড়তি রাজস্বের জন্য নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আগামী অর্থবছরে করদাতার জন্য রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা কোনোভাবেই বাড়ানো হবে না। ৩০ অক্টোবর হবে অপরিবর্তনীয় ডেডলাইন। উৎসে কর ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করার জন্য নতুন উৎসে কর ইউনিট স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন মুহিত।

কর প্রস্তাবে কিছু সুবিধা :অর্থমন্ত্রী কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও করেছেন। অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যে শুল্ক অব্যাহতি ও রেয়াতি সুবিধা বহাল রেখেছেন। গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতের মূলধনি পণ্যে শুল্ক-কর অব্যাহতিও বহাল রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ আমদানি পণ্যে শুল্ক ও কর রেয়াত রয়েছে। শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতিতে একই সুবিধা অব্যাহত রয়েছে।

উৎসবমুখর সংসদ :অধিবেশন কক্ষের দর্শক গ্যালারিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। বাজেট উত্থাপন শেষে অর্থ বিল-২০১৬ সংসদে উত্থাপন করা হয়। বাজেট উত্থাপনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। সংসদের ভেতরে-বাইরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট থেকে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন। ৬টা ৫৫ মিনিটে তিনি তার বক্তৃতা শেষ করেন। এর মধ্যে আসরের নামাজের জন্য ২০ মিনিটের বিরতি দেওয়া হয়। বাজেট উপস্থাপনের জন্য অধিবেশন কক্ষে চারটি বড় স্ক্রিন স্থাপন করা হয়। যার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বাজেট বক্তৃতার পুরো অংশ ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বসে বাজেট বক্তৃতা করেন অর্থমন্ত্রী। সংসদ সদস্যরা বারবার টেবিল চাপড়ে তাকে উৎসাহ দেন।

বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা :বেসরকারি বিনিয়োগ গতিশীল হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামো সমস্যা সমাধানের কথা বললেও শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগের জন্য ২০১৮ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। মুহিত বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে কিছুটা স্থবিরতা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ, আমদানি-রফতানি, মূলধনি যন্ত্রপাতির এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেড়েছে। এটি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি-পরিবহনসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে চলমান উদ্যোগ ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ক্রমেই ত্বরান্বিত করছে। চলমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকার আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

ব্যয় পরিকল্পনা :আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রকৃত বাস্তবায়নের হিসাব রয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের। ওই অর্থবছরে বাজেট ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ । চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকারের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা ২৯ শতাংশ বেশি। নতুন বাজেটে অনুন্নয়নমূলক ব্যয় ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা। আগের বাজেটে যা ছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে কমে হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আগের বাজেটে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে এডিপির আকার ছিল ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ৯৫ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি ধরা হয়েছে ৯১ হাজার কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা :নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আসবে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। কর ছাড়া আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আয় ও মুনাফার ওপর কর থেকে আসবে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। ভ্যাট থেকে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি :ব্যয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় অঙ্কের দেশি-বিদেশি ঋণ নিতে হবে। নতুন বাজেটে এ ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকে নেওয়া হবে ২২ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ঋণ নেওয়া হবে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।

বিদেশি ঋণ ও অনুদান ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা, তাও উচ্চাভিলাষী। গত বাজেটে ৩০ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। ঠিকমতো বৈদেশিক সহায়তা না পেলে অর্থমন্ত্রীকে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বেসরকারি খাতের ঋণ গ্রহণে এবং জিনিসপত্রের দামের ওপর।

খাতভিত্তিক বরাদ্দ :নতুন বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সামাজিক অবকাঠামো খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ২৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বাজেটে এ ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ সামগ্রিক ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ কিছুটা কমে হয়েছে বাজেটের ২৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত বাজেটে যা ৩০ শতাংশের বেশি ছিল। বাজেটের অংশ হিসেবে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *