মেধাবীরাও হারাবে ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ

Slider শিক্ষা

16157_fff

 

 

 

 

 

যোগ্যতা থাকার পরও ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ হারাতে পারে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদনে পছন্দের কলেজের তালিকা কম দেয়ায় তারা এ সুযোগ হারাতে পারে। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ভর্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, গত বছর পছন্দের তালিকা কম দেয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজ পায়নি। এবারও তাই হচ্ছে। অধিক আত্মবিশ্বাসের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। বোর্ড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার একটি মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। সবাই যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী কলেজ প্রথমবার পেয়ে যাবে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী গোল্ডেন জিপিএ-৫ থাকার পরও ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ হারাবে। কারণ তারা কেবল একটি থেকে সর্বোচ্চ তিনটি কলেজে আবেদন করছে। অথচ তাদের অনলাইনে দশটি এবং এসএমএসের দশটি করে মোট ২০টি কলেজে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
গতকাল অনলাইন ভর্তি মনিটরিং সেলে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর একটি স্কুল থেকে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন ছাত্রী। একাদশে ভর্তির জন্য তিনি ভিকারুননিসা কলেজ ও ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এই দুটি পছন্দ করে আবেদন করেছে। এই শিক্ষার্থীর আরও ১৮টি কলেজ পছন্দ করার সুযোগ ছিল।
বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, এই শিক্ষার্থীর ভালো কলেজ পাওয়ার একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গেল। কারণ দুটি কলেজেই মাধ্যমিক স্তর রয়েছে। তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পর শূন্য থাকার সাপেক্ষে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তি করান তারা। গত বছর ভিকারুননিসা থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তির পর বাইরের মাত্র ২৭৫জন ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল। এই ২৭৫টি সিটের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল পৌনে দুই লাখ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ ছিল ৩৩ হাজারের বেশি। মানে জিপিএ-৫ পাওয়া পর প্রায় ৩৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই কলেজ ভর্তির সুযোগ পাননি। একই অবস্থা ছিল রেসিডেন্সিয়ালেও। কর্মকর্তারা বলছেন, এই শিক্ষার্থীর গোল্ডেন জিপিএ-৫ থাকায় তিনি ও তার অভিভাবকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। কোনো কারণে এই শিক্ষার্থী দুটি কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেলে সে আর কোনো ভালো কলেজে সুযোগ পাবে না। কারণ তখন সে চলে যাবে অপেক্ষমাণ তালিকায়।
বিষয়টি ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, গতকাল পর্যন্ত  অনলাইনে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীই একটি থেকে সর্বোচ্চ তিনটি কলেজে আবেদন করেছে। অথচ তারা যে তিনটি কলেজ পছন্দ দিয়েছে সবগুলোতে আসনের বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি আবেদন পড়ে। মানে ৯০%-এর বেশি আবেদনকারী সেখানে ভর্তির সুযোগ পাবে না। এতে অনেকেই বাদ পড়বে। গত বছর একাধিক মেধা তালিকা করা হলেও এবার একটি মেধা তালিকা হবে। এ কারণে একবার বাদ পড়া মানে সরাসরি সে অপেক্ষমাণ তালিকায় চলে যাবে। অনেকেই এই ভুলটি করছে। এতে  তারা ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ হারাবে। তিনি বলেন, আমাদের পরামর্শ সবাই যেন পছন্দের কলেজের সংখ্যা যতদূর সম্ভব বাড়িয়ে দেন। এতে রিস্ক কম। আন্তঃবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যারা একটি বা দুটি কলেজ পছন্দ দিয়ে আবেদন করেছেন, তারা ইচ্ছে করলে এখন তা সংশোধন করতে পারেন। এজন্য বোর্ডের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাড়ে ৪ লাখ ভর্তিচ্ছুর ১২ লাখ আবেদন: একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিতে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চার দিনে সাড়ে তিন লাখ ভর্তিচ্ছুক আবেদন সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে অনলাইনে সাড়ে ৩ লাখ ও এসএমএসের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ। একজন শিক্ষার্থী একাধিক আবেদন করায় আবেদনের সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি সূত্রে জানা গেছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন গতকাল সন্ধ্যায় জানান, চার দিনে ১২ লাখেরও বেশি আবেদন পড়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেক স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবেদনে সাড়া দিচ্ছে। সার্ভারে কোনো জটিলতা না থাকায় অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুরা শুরুর দিকেই আবেদন শেষ করছে। টেলিটকের কাছ থেকে ফিরতি এসএমএস পেতে দেরি হওয়ার যে অভিযোগ ছিল সেটাও অনেকাংশে কমে গেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পুরো বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছে।
সারা দেশে প্রায় সাড়ে চার হাজার কলেজ রয়েছে। আর এতে আসনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৯ লাখ। তবে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ১৪ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ জন। চলতি বছরে উত্তীর্ণদের সঙ্গে গত বছর পাস করা শিক্ষার্থীদেরও আবেদনের সুযোগ থাকছে। এবারই শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ১০টি ও এসএমএসের মাধ্যমে ১০টি মোট ২০টি কলেজে আবেদনের সুযোগ পাচ্ছে। আগামী ৯ই জুন রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে ১০টি কলেজ পছন্দ করে আবেদন করতে ফি দিতে হবে ১৫০ টাকা। আর এসএমএসে প্রতিটি আবেদনের জন্য ফি লাগবে ১২০ টাকা। ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের তালিক প্রকাশ করা হবে ১৬ই জুন। রাজধানীর তিনটি কলেজ আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের অনলাইন ভর্তির আওতায় আসেনি। এদের মধ্যে নটরডেম কলেজের ভর্তি ফরম বিতরণ শেষ হয়েছে। আর সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হলিক্রস কলেজে ভর্তি ফরম বিতরণ আজ শেষ হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *