বাংলাদেশে বিদেশি অর্থ সাহায্য ব্যবহারে দুর্নীতি

Slider সারাবিশ্ব

 

16159_mail

 

 

বাংলাদেশে কার্বন নির্গমন কমাতে কোয়াড বাইক ব্যবহারের জন্য অর্থ দিয়েছেন আপনি। অথচ, দেশটি নতুন পাঁচটি কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ব্যয় করছে ৭০০ কোটি ডলার। এক প্রতিবেদনে বৃটিশ করদাতাদের উদ্দেশ্য করে এমন শিরোনামই ছেপেছে দেশটির অন্যতম শীর্ষ পত্রিকা দ্য ডেইলি মেইল। প্রতিবেদনে বলা হয়, মেইল অন সানডের তদন্তে বাংলাদেশে বিদেশি দাতা দেশগুলোর অর্থের ব্যবহারে দুর্নীতির বিষয়টি উঠে এসেছে।
জনৈক মাহবুব আলমের একটি কোয়াড বাইকের প্রসঙ্গ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবেদন। বলা হয়, দুনিয়ার দীর্ঘতম সৈকতে নিজের ৪০০ পাউন্ডের কোয়াড বাইক চালান মাহবুব আলম। এ গাড়িটি কেনা হয়েছে বৃটিশ করদাতাদের টাকায়। তিনি বলেন, ‘এ গাড়িটি পাওয়ার পর, আমার জীবনটা আরেকটু ভালো হয়েছে। পাশাপাশি, আমি পরিবেশ রক্ষা করছি।’ কিন্তু, এই দাবি দৃষ্টিকটু। কারণ, হাই-অকটেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় এ বাইকে। তাই এখান থেকে নির্গত হয় কার্বন।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, মাহবুবুল সহ অন্যরা যে বাইক ব্যবহার করে পর্যটকদের ঘোরায়, তা সৈকতের লাল কাঁকড়ার জন্যও ক্ষতিকর। কিন্তু মাহবুবুলকে বলা হয়েছিল, বিদেশি দাতাসংস্থার প্রধানরা তাকে বৃটিশ করদাতাদের টাকা ধার দিয়েছে, যাতে করে সে এই বাইক কিনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। এ বাইক পাওয়ার আগে, মাহবুবুল পাশের বন থেকে গাছ কেটে জীবনধারণ করতো। অর্থাৎ, এখানে লক্ষ্য হলো, মাহবুবুলের জন্য বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে ওই গাছগুলোকে বাঁচানো। এছাড়া, তাকে নতুন গাছ লাগাতে উৎসাহও দেয়া হয়। আর বাংলাদেশের বনাঞ্চল কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করবে। এভাবে দেশের কার্বন নির্গমনের হার কমবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্দেশ্য মহৎ হলেও, এ যুক্তিতে খটকা আছে। বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। তবে টেকসই ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ফলে, ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞানুযায়ী মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে দেশটি।
অথচ, ৭০০ কোটি ডলার খরচ করে নতুন ৫টি বিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অর্থ দেশটির আছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে লাখ লাখ টন কয়লা জ্বলবে, যা কিনা দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ জ্বালানি। ব্যাপারটা শুধু এমন নয় যে, সাহায্যপুষ্ট বিদেশি প্রকল্পের ফলে যে লাভ হচ্ছে, তা খর্ব করে দেবে এসব কেন্দ্রের কার্বন নির্গমন। বরং, পাঁচটির অন্যতম রামপাল নির্মিত হবে খুবই সংবেদনশীল সুন্দরবনের কাছ ঘেঁষে। সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এখানেই রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। ছাই, অ্যাসিডিক সালফার ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের ঝুঁকিতে থাকবে এ বনটি।
বলা হয়, মাহবুবুলের কোয়াড বাইকের পেছনে অর্থায়ন করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি)। কিন্তু এই তহবিল এখন নেই। কারণ, এ তহবিল পরিচালনা নিয়ে সমস্যা খুঁজে পেয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মতে, জবাবদিহিতার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করবে এমন কোনো বাংলাদেশি ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব! তাই প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে। বৃটেনের বিপুল পরিমাণ অর্থ এখন অব্যবহৃত রয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো বাতিল হবে বা অসমপূর্ণ হয়ে থাকবে।
ডিএফআইডি’র একটি পর্যালোচনায় স্বীকার করা হয়েছে, এর ফলে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেইঞ্জ রিসাইলেন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ) প্রত্যাশিত ফল দিতে পারবে না। পারবে না আর্থিক টার্গেট পূরণ করতে। এর ফলে রাজনৈতিক ও সুনাম নিয়ে প্রতিকূল প্রভাব পড়বে।
গত মাসে বৃটিশ পার্লামেন্টে ১২০০ কোটি পাউন্ড (বৃটেনের জাতীয় আয়ের ০.৭ শতাংশ) বিদেশি সাহায্য হিসেবে ব্যয় করা নিয়ে একটি বিতর্ক হয়। প্রয়োজন থাকলেও, না থাকলেও। এ সংক্রান্ত একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছে ২ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
প্রতিবেদনটিতে কিভাবে বৃটিশ করদাতাদের অর্থ বাংলাদেশে ব্যয় হচ্ছে, তা নিয়ে অনেক কিছু তুলে ধরা হয়। যেমন, ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রকল্প রয়েছে, যার মাধ্যমে ‘বন্যারোধী’ গৃহ নির্মাণ করা হয়। এসব গৃহে খড়কুটোর মতো বাঁশের বেড়া ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বেড়া এতটাই দুর্বল যে, সাধারণ পানিই এটি ঠেকাতে পারবে না, বন্যা দূরে থাক। ডিএফআইডি স্বীকার করেছে, বৃটিশ অর্থ বাংলাদেশে দুর্নীতির করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একটি পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্রতারণা ও দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন দেশ। সরকারের সঙ্গে কাজ করার ঝুঁকি আরো বেশি! বিসিসিআরএফ তহবিল এখন নেই। তাই বাংলাদেশে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান আর নেই, যা জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারবে। অর্থাৎ, অর্থ আছে, কিন্তু খরচ করার উপায় নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *