নজরুল ইসলাম শ্রীপুর থেকে ফিরে: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যেই প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে সরকারী খাস জমির লুটপাটের মহোৎসব চলছে। প্রভাবশালীরা জবর দখল করে নিচ্ছে সরকারী পুকুর, অফিসের প্রাঙ্গন, বাজারের জমি ও রেলের জায়গা। জবর দখল হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার জমি।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রীপুর পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামে প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৩ একর ৫৮ শতাংশ সরকারী খাস পুকুরটি প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই জবর দখল করে নিচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৪৩নং শ্রীপুর মৌজার সি.এস পর্চা অনুযায়ী কোর্ট অব ওয়ার্ডস এস্টেটের ৪নং খতিয়ান ভুক্ত ১৭৫৫/২২০৫ দাগে ৩ একর ৫৭ শতাংশ জমি যাহার মধ্যে এস.এ রেকর্ডে কিশোরী মোহন পোদ্দারের নামে ১২৮নং খতিয়ানে ৪৮ শতাংশ জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। বাকী ৩.০৯ একর সম্পত্তি সরকারী খাস পুকুর হিসেবে প্রতিবছরেই সরকারী ভাবে লীজ দিয়ে রাজস্ব আদায় হচ্ছে। স্থানীয় একটি জ্বালিয়াত চক্র জ্বাল জালিয়াতির মাধ্যমে বানোয়াট পর্চা সৃষ্টি করে ১২৮ খতিয়ান ভুক্ত ১৭৫৫/২২০৫নং দাগে ৪৮ শতাংশ জমির স্থলে ৩.৪৮ শতাংশ বানিয়ে ওই সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল শুরু করে।
এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরও থেমে থেমে চলছিল জবর দখল। সম্প্রতি গ্রীন ভিউ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ ওই সরকারী খাস পুকুরের চারপাশে জোরে সরেই নির্মাণ করছে পাকা সীমানা দেয়াল। অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভিন্ন দাগ খতিয়ানের জমির কাগজ দেখিয়ে একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জ্বালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল করে নিয়ে অন্য দাগ খতিয়ান উল্লেখ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে রেখেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় একটি চিহ্নিত দালালচক্র প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাতারাতি সরকারী খাস পুকুরটি জবর দখল করে নিচ্ছে। এছাড়া উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ১২৮ শতাংশ জমির মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ ভাগ জমি জবর দখল হয়ে গেছে। সরকারী দলের প্রভাব খাটিয়ে জবর দখলকারীরা জমিদার কালী নারায়নগোত্রের কাচারি বাড়ি তথা বর্তমান কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আশপাশ জবর দখল করে গড়ে তুলছে দোকানপাট, স্যানেটারী নির্মাণ কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অবৈধ স্থাপনা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রকাশ্যেই রাতদিন চলছে সরকারী অফিস প্রাঙ্গনের জমি।
এ ব্যাপারে কাওরাইদ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, তিনি অনেকটাই জবর দখলকারীদের কাছে নিরুপায়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জবর দখলকারীদের তালিকা প্রেরন করেছেন।
শ্রীপুর পৌর শহরের পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের মূল গেইটের সামনেই প্রায় ১ কোটি টাকা মূল্যের সরকারী খাস জমি জবর দখল হয়ে গেছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী ভূমি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ওই জমিতে রাতারাতি সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেন। শ্রীপুর পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আলী হোসেন জানান, ওই স্থানে খাস জমি নাই, পৌরসভার নামে রাস্তার জমি রেকর্ডভুক্ত আছে।
এছাড়া রাজেন্দ্রপুর রেলস্টেশন থেকে কাওরাইদ পর্যন্ত ৪টি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকা ও রেল লাইনের দু’ধারে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারী রেলওয়ের জমি জবর দখল হয়ে গেছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র রেলওয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজস করে ওই সমস্ত রেলওয়ের জমিতে রাতারাতি গড়ে তুলছে বসত বাড়ী, দোকানপাটসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জবর দখল হয়ে যাচ্ছে সরকারী সম্পত্তি। প্রকাশ্যেই সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল হয়ে গেলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিরব। এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বনানী বিশ্বাস রবিবার উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।