বিশ্ব নেতৃত্বের সারিতে বসে জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণ, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠকসহ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ কর্মসূচিতে জাপানে তিন দিন ব্যস্ত সফর কাটিয়ে দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৯ মে) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে (বিজি-১০৭৯) টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান টোকিওতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, জাপানের রাষ্ট্রাচার প্রধান কাওরু শিমাজাকিসহ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ভিভিআইপি ফ্লাইটটি।
জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে অংশ নিতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের বিশেষ আমন্ত্রণে গত ২৬ মে দেশটি সফরে যান শেখ হাসিনা।
তার সফরসঙ্গী হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, অপর সিনিয়র সচিব ও সদস্য জিইডি অধ্যাপক ড. শামসুল আলম প্রমুখ।
এছাড়া যান সংবাদকর্মী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের একটি বড় দল।
ওই দিন সন্ধ্যায় দেশটির নাগোয়ায় পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী সেখানকার সফরকালীন আবাসস্থল হোটেল হিলটনে ওঠেন। পরদিন ২৭ মে সকাল থেকেই শুরু হয় তার ব্যস্ত কর্মসূচি।
সকালে প্রধানমন্ত্রী যোগ দেন জি-৭ সম্মেলনের আউটরিচ মিটিংয়ে, যেখানে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁাসোয়া ওঁলাদ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজি ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো আবের মতো বিশ্বনেতারা। আরও অংশ নেন রয়েছেন লাওস, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, শ্রীলঙ্কা ও শাদ’র সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান; জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি ও আইএমএফ’র প্রেসিডেন্টরা।
আউটরিচের দু’টি অধিবেশনে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতা হিসেবে বিশ্বের সাতশ’ কোটি মানুষের উন্নয়নের বর্তমান অবস্থা, সে বিষয়ে ভাবনা ও দর্শনের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশলাদি ও মতবিনিময় হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলসহ শীর্ষ নেতাদের।
দুপুরে সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনের ফাঁকে শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে। সে বৈঠকে ক্যামেরন বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একইসঙ্গে আগ্রহ প্রকাশ করেন এ উন্নয়নের গল্পের অংশ হওয়ার। ক্যামেরন ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়া-না হওয়ার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ চান।
সম্মেলনকেন্দ্রিক দিনভর এ ব্যস্ততার পর হোটেল হিলটনে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরদিন ২৮ মে সকাল থেকেও শুরু হয় তার ব্যস্ততা।
সকাল ৯টায় হিলটনেই প্রধানমন্ত্রী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈথ্রিপালা সিরিসেনার সঙ্গে। সে বৈঠকে বন্যাকবলিত শ্রীলঙ্কাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
এরপর ১০টায় প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে। দ্বিপাক্ষিক এ বৈঠকে আলোচনা হয় দু’দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে। এসময় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন শিনঝো আবে। বাংলাদেশের তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হলে নতুন ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নির্মাণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জাপানি প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণেও সহযোগিতার কথা বলেন। বৈঠকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসাও করেন।
নাগোয়ার ব্যস্ততা শেষে দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী সফরসঙ্গীদের নিয়ে আসেন রাজধানী টোকিওতে। এখানে তিনি ওঠেন মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন টোকিওতে বাংলাদেশ দূতাবাসের অত্যাধুনিক নকশায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট নতুন চ্যান্সারি ভবনের। সন্ধ্যায় তিনি ফিরে আসেন মান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেলে।
রোববারও সকাল থেকেই শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর কর্মব্যস্ততা। সকালে তিনি প্রাতঃরাশ বৈঠক করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জাপানি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সেজন্য সম্ভাব্য সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথাও বলেন। এ বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাপানের সংগঠন ‘জেটরো’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়, যার মধ্য দিয়ে দু’পক্ষই বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে পারবে বলে জানানো হয়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী দুপুরেই যান ইমপেরিয়াল হোটেলে। এখানে তিনি অংশ নেন জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের দেওয়া ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ অনুষ্ঠানে। এই সংবর্ধনা নিয়েই তিন দিনের ব্যস্ততম সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী দেশের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন।