আরেকটি ঐতিহাসিক রায় এলো সুপ্রিম কোর্ট থেকে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত ৫৪ এবং রিমান্ডের ১৬৭ ধারা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের আপিল খারিজ করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল এ রায় ঘোষণা করে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এ রায়ের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মনে হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করছি।
রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আপিল খারিজ করা হলো। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে হাইকোর্ট কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে কিছু সংশোধনী থাকবে। আমরা একটা গাইডলাইন করে দেবো।
আইনবিদরা বলছেন, আপিল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকলো। এ রায়ের ফলে হাইকোর্ট যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল এখন তা সরকারকে মেনে চলতে হবে। রায়ের পর রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বহাল থাকছে। তা মানায় এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। এ মামলায় রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম। অন্যদিকে, সরকার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ মামলার ক্ষেত্রে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নীতির আশ্চর্য মিল রয়েছে। জোট সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আপিল দায়ের করেছিল। অন্যদিকে, মহাজোট সরকার একই অবস্থান বহাল রেখে আপিল চালিয়ে যায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করার পর ওই বছরের ২৩শে জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ-কার্যালয়ে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। তার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল হাইকোর্ট এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়। রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে ২০০৪ সালে তা মঞ্জুর হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা সে সময় স্থগিত করা হয়নি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২শে মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুই কার্যদিবস শুনানি করে গত ১৭ই মে আদালত রায়ের জন্য ২৪শে মে দিন ঠিক করে দেয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা সমূহের মধ্যে রয়েছে- ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাঁচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
রায়ের প্রতিক্রিয়া
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালত নির্দেশনা দিলে সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা খারাপ নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনে কিছু কিছু ইমার্জেন্সি প্রভিশন থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যখন ৫৪ ধারা রাখা হয়েছে, তখন সেটা ইমার্জেন্সি প্রভিশন হিসেবেই রাখা হয়েছে। তবে, এটা ভালো নাকি মন্দ, তা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইনকে যুগোপযোগী করতে, মানুষের স্বার্থে ব্যবহার উপযোগী করতে বহুবার সংশোধন করা হয়েছে। জনগণের উপকারার্থে দরকার হলে আমরা আবার তা সংশোধন করব। এদিকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের নীতিমালার ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেখানে আমাদের আর বলার কিছু নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আসলে আমরা দেখতে পাবো- কোথায় আমাদের ঘাটতি হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৫৪ ধারার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও এ সময় জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্ট এ বিষয়ে যে রায় দিয়েছিল তা ছিল মন্তব্য ও সুপারিশ। আপিল বিভাগ কিছু যাছাই-বাছাই বা রদবদল করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে আপিল বিভাগের নির্দেশনা পালন করা যেতে পারে। তবে, যাই নিদ্ধান্ত নেয়া হোক আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে নেয়া হবে। আশা করি আদালতও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবেন। পরিচয় না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করে না উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমার মনে হয় না পরিচয় ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে যায়। আর সাদা পোশাকে যারা এসব করছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নয়। এখন দেখা যাচ্ছে কাউকে শত্রুতাবশত ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রিটের পক্ষে আইনি লড়াই করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আপিল বিভাগের এই রায়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে যে নির্দেশনা দিয়েছিল আপিল বিভাগ কিন্তু তা স্থগিত করেনি। নির্দেশনা এখনও বলবৎ আছে। আদালতও বলেছেন এই রায় সবসময় বলবৎ ছিল। এটা স্টে ছিল না। যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্টে আইন পাস না হয় ততদিন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটবে। তাই আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত আদালতের এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। তিনি বলেন, এখন হাইকোর্টের যে নির্দেশনা ছিল আপিল খারিজ হওয়ার পর আমি মনে করি এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করা রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য। তাই আইনের শাসন রক্ষায় সার্বিক দায়িত্ব পালন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আশা করি।
শুনানিতে অংশ নেয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ১৩ বছর আগে ৫৪ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। আপিলের আজকের (গতকাল) রায়ে হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রইলো বলে আমরা ধরে নিচ্ছি। এখন নীতিগতভাবেও হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, আপিল খারিজ করা হলো। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে হাইকোর্ট কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে কিছু সংশোধনী থাকবে। আমরা একটা গাইডলাইন করে দেবো।
আইনবিদরা বলছেন, আপিল খারিজ হওয়ায় হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকলো। এ রায়ের ফলে হাইকোর্ট যেসব নির্দেশনা দিয়েছিল এখন তা সরকারকে মেনে চলতে হবে। রায়ের পর রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বহাল থাকছে। তা মানায় এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। এ মামলায় রিট আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম। অন্যদিকে, সরকার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ মামলার ক্ষেত্রে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের নীতির আশ্চর্য মিল রয়েছে। জোট সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আপিল দায়ের করেছিল। অন্যদিকে, মহাজোট সরকার একই অবস্থান বহাল রেখে আপিল চালিয়ে যায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করার পর ওই বছরের ২৩শে জুলাই মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ-কার্যালয়ে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর বিচারপতি হাবিবুর রহমান খানের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত শেষে কমিটি ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের পক্ষে কয়েকটি সুপারিশ করে। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে। তার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল হাইকোর্ট এ বিষয়ে কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়। রায়ে ছয় মাসের মধ্যে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে। রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে ২০০৪ সালে তা মঞ্জুর হয়। তবে হাইকোর্টের নির্দেশনা সে সময় স্থগিত করা হয়নি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২শে মার্চ আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুই কার্যদিবস শুনানি করে গত ১৭ই মে আদালত রায়ের জন্য ২৪শে মে দিন ঠিক করে দেয়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা সমূহের মধ্যে রয়েছে- ক. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না। খ. কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। গ. গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। ঘ. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য স্থান থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। ঙ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। চ. গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাঁচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। ছ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে। ট. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।
রায়ের প্রতিক্রিয়া
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালত নির্দেশনা দিলে সরকার সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা খারাপ নয়, উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনে কিছু কিছু ইমার্জেন্সি প্রভিশন থাকে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে যখন ৫৪ ধারা রাখা হয়েছে, তখন সেটা ইমার্জেন্সি প্রভিশন হিসেবেই রাখা হয়েছে। তবে, এটা ভালো নাকি মন্দ, তা ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইনকে যুগোপযোগী করতে, মানুষের স্বার্থে ব্যবহার উপযোগী করতে বহুবার সংশোধন করা হয়েছে। জনগণের উপকারার্থে দরকার হলে আমরা আবার তা সংশোধন করব। এদিকে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের নীতিমালার ভিত্তিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, সেখানে আমাদের আর বলার কিছু নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আসলে আমরা দেখতে পাবো- কোথায় আমাদের ঘাটতি হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৫৪ ধারার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও এ সময় জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্ট এ বিষয়ে যে রায় দিয়েছিল তা ছিল মন্তব্য ও সুপারিশ। আপিল বিভাগ কিছু যাছাই-বাছাই বা রদবদল করবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে আপিল বিভাগের নির্দেশনা পালন করা যেতে পারে। তবে, যাই নিদ্ধান্ত নেয়া হোক আদালতের নির্দেশনার ভিত্তিতে নেয়া হবে। আশা করি আদালতও বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করবেন। পরিচয় না দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করে না উল্লেখ করে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, আমার মনে হয় না পরিচয় ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে যায়। আর সাদা পোশাকে যারা এসব করছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ নয়। এখন দেখা যাচ্ছে কাউকে শত্রুতাবশত ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রিটের পক্ষে আইনি লড়াই করা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম আপিল বিভাগের এই রায়ে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলেন, হাইকোর্ট তার রায়ে যে নির্দেশনা দিয়েছিল আপিল বিভাগ কিন্তু তা স্থগিত করেনি। নির্দেশনা এখনও বলবৎ আছে। আদালতও বলেছেন এই রায় সবসময় বলবৎ ছিল। এটা স্টে ছিল না। যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্টে আইন পাস না হয় ততদিন পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনার প্রতিফলন ঘটবে। তাই আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত আদালতের এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। তিনি বলেন, এখন হাইকোর্টের যে নির্দেশনা ছিল আপিল খারিজ হওয়ার পর আমি মনে করি এই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করা রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্য। তাই আইনের শাসন রক্ষায় সার্বিক দায়িত্ব পালন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকে আশা করি।
শুনানিতে অংশ নেয়া জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ১৩ বছর আগে ৫৪ ধারাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়েছিল। আপিলের আজকের (গতকাল) রায়ে হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রইলো বলে আমরা ধরে নিচ্ছি। এখন নীতিগতভাবেও হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।