বহির্বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি সপ্তাহে জাপান এবং জুনের শুরুতে সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন। জাপানে উন্নত বিশ্বের সাতটি দেশ নিয়ে গঠিত জি-সেভেন এর শীর্ষ সম্মেলনের আউট রিচ প্রোগ্রামে অংশ নেবেন তিনি। আর রিয়াদে তার সফরটি হবে পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয়। সৌদি বাদশাহ’র আমন্ত্রণে দেশটি সফর করবেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপানসহ উন্নত ৭ রাষ্ট্রের জোট জি-৭ এর আউটরিচ মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ প্রায় চূড়ান্ত।
বুলগেরিয়া থেকে গতকাল ভোরে ঢাকায় ফেরার পর তার এডভান্স টিমের সদস্যরা রাতেই টোকিও’র উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী যাবেন আগামী বুধবার। সেখানে বহুপক্ষীয় এ আয়োজনে অংশ নেয়া ছাড়াও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী জাপান গিয়েছিলেন। তার সফরের ফিরতি সফর হিসেবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এরই মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন। চলতি মেয়াদে জাপানে এটি হবে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় সফর।
রাজনৈতিক কারণে সফরটিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন সেগুনবাগিচার কর্মকর্তারা। আগামী ২৬-২৮শে মে জাপানের আইস সিমা বা সিমা প্যানিনসোলায় এবারে জি-৭’র মিটিংটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ বিশ্বের উন্নত দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। ৮ বছরের মধ্যে এশিয়ায় জি-৭’র এটি প্রথম মিটিং। আয়োজক রাষ্ট্রের ঘোষণা মতে, এবারের আয়োজনে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশের সরকার প্রধান ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাউস, পাপুয়া নিউগিনির রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা আমন্ত্রিত হয়েছেন। উল্লেখ্য কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র জি-৭ জোটের সদস্য। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা পর্যবেক্ষক হিসেবে রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, বহুপক্ষীয় ওই আয়োজনে নিরাপত্তা, উদ্বাস্তু, সাইবার ইস্যু, মহাকাশ বিজ্ঞান, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, নারী ও সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, শান্তিরক্ষা, দুর্নীতি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য বৈশ্বিক বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত যে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের আলোচনা হতে পারে। সে মতেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। যদিও গতকাল পর্যন্ত সাইড লাইনের কোনো সূচি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানানো হয়েছে। ওই আয়োজন শেষে আগামী ২৯শে মে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হবে।
রিয়াদ সফর ৪-৬ই জুন: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে কোনো পরিবর্তন না হলে আগামী ৪-৬ই জুন রিয়াদে প্রধানমন্ত্রীর সফরটি হবে। বর্তমান মেয়াদে এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হবে।
এর আগে ২০০৯ সালে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সৌদির শ্রমবাজার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতা চাওয়া হবে। অন্যদিকে সৌদি আরবের পক্ষে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। কর্মকর্তারা বলেন, সৌদি আরব উগ্রবাদ মোকাবিলায় একটি জোট গঠন করেছেন এবং বাংলাদেশ সে জোটের সদস্য। বাংলাদেশ কোনো সামরিক শক্তি ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না বরং তারা জ্ঞান, দক্ষতা ও অন্যান্য বিষয়ে জোটকে সহায়তা করতে চায়।
অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর রিয়াদ সফরে বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির সহযোগিতা বিষয়ে তিনটি চুক্তি সই হতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক-নার্সসহ দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ৮ই জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সৌদি সফরের সময় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয় সৌদি আরব। শেখ হাসিনার সফর নিয়ে গত ৮ই মার্চ ঝটিকা সফর করে গেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল আল জুবায়ের।
সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সৌদি আরব সফরকালে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী মার্চ থেকে মে’র মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরসূচি ঠিক করতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তখন সৌদি বাদশার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তাও নিয়ে যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুবায়ের তখন বলেছিলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সৌদি বাদশাহ সালমান অপেক্ষায় আছেন।