তিনটি জিনিসকে ‘শূন্য’ করতে ড. ইউনূসের আহ্বান

Slider অর্থ ও বাণিজ্য গ্রাম বাংলা

528c6438028e9-yonus

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিনটি জিনিসকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আহ্বান জানিয়েছেন। একটি দারিদ্র্য, একটি বেকারত্ব এবং আরেকটি হলো পৃথিবী থেকে কার্বন–দূষণ দূর করা।
আজ বুধবার ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে চতুর্থ গ্লোবাল উইমেন ডেলিভার কনফারেন্সে তিনি এ বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য উদ্ভাবনী অবদানের জন্য মুহাম্মদ ইউনূসকে উইমেন ডেলিভার সম্মাননা দেওয়া হয়।
নিউইয়র্কভিত্তিক এনজিও উইমেন ডেলিভার আয়োজিত এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ইনভেস্ট ইন গার্লস অ্যান্ড উইমেন-ইট পেইস’। সম্মেলন আয়োজনে ডেনমার্ক সরকার, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), ইউএন-উইমেনসহ নানা সংস্থা ও সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।
আজ বুধবার সকালে ‘ইনভেস্টিং ইন গার্লস অ্যান্ড উইমেন : এভরিবডি উইনস’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দারিদ্র্য মানবসমাজে বসবাস করতে পারে না। তাকে জাদুঘরে পাঠাতে হবে। এতে নারীরা বেশি লাভবান হবে, কেননা নারীরা বেশি দারিদ্র্যের শিকার।
ইউনূস বেকারত্বকে কৃত্রিম ইস্যু হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষাপদ্ধতির কারণে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজে। তারা ভাবে, চাকরি পাওয়াই জীবনের একমাত্র গন্তব্য। অথচ চাকরি কোনো গন্তব্য হতে পারে না। তাদের উদ্যোক্তা হতে হবে। এটিই গন্তব্য।
ইউনূসের মতে, সবাই উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ হলে আজ থেকে ৩০ বা ৩৫ বছর পরে ছেলেমেয়েরা বেকারত্ব কাকে বলে তা বুঝতেই পারবে না।

ইউনূসের মতে, দারিদ্র্য ও বেকারত্বকে শূন্যের কোঠায় নামানোর পাশাপাশি কার্বন–দূষণকেও শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে।

আলোচনায় ইউনূস সেন্টারের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেল, গ্রামের নারীদেরও গ্রামীণফোনের মুঠোফোন ব্যবহার, সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, গর্ভবতী নারীদের কাছে আল্ট্রাসনোগ্রাম সেবা নিয়ে যাওয়া, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় সরাসরি চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়াসহ নানান উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা শুরু করার কারণে অন্যান্য কোম্পানি কীভাবে এগিয়ে আসছে, সে কথাও জানান।

তরুণ সমাজের উদ্দেশে ইউনূস বলেন, তোমরা কখনো চাকরির পেছনে ঘুরবে না। এতে সব ধরনের প্রতিভা ধ্বংস হয়ে যায়। চাকরিকে তিনি পুরোনো ফ্যাশন হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। মুহাম্মদ ইউনূস যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন বিশাল মিলনায়তনে শুধু হাততালির শব্দ।

টেকনোলজি এবং আর্থিক সহায়তা এবং সঠিক তথ্য একসঙ্গে পেলে নারীদের এগিয়ে যাওয়া সহজ হয় বলেও মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখ করেন।

এ সেশনে অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমানে দি মেরি রবিনসন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান জেনসেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ্যানে বিরগিট এলব্রেক্টসেন, জাতিসংঘ শিশু তহবিলের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক, এরিকসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হেন্স ভেস্টবার্গ।

সেশনের শেষ পর্যায়ে স্কুলের পোশাক গায়ে ভারতের মাপেট চামকি সবাইকে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার এবং ভালো করে হাত ধোয়ার আহ্বান জানায়।

এবারের সম্মেলনে বিশ্বের ১৬৯টি দেশ থেকে মন্ত্রী, সাংসদ, সাংবাদিক, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি, তরুণ দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। আজ প্লেনারি সেশন শেষে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেলফি তুলতে চান। ফলে হুড়োহুড়ি লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত আয়োজকেরা সার্বিক নিরাপত্তা দিয়ে ইউনূসকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *