আম গাছের ডালে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে অন্য ডালের পাকা আম পারতে পারতে পায়ের নীচে ভর করা ডালটি যেন ভেঙে না যায়। এমন ঘটনা ঘটছেনা এমন নয়। তবে কম। যেমন স্বাভাবিক ঘটনা বেশী ঘটে। অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে কম। ওই কম ঘটনার হাত থেকে দূরে থাকতেই আমরা সতর্ক থাকি। আর অস্বাভাবিক ঘটনা থেকে মুক্ত থাকতেই নিরাপত্তার কথা বলি আমরা, এটাই স্বাভাবিক।
পেয়ে না পেয়ে পাওয়া গনতন্ত্র নিয়ে আমরা ২০নবছর ধরে ছেলে খেলা করছি। এটা আমাদের শেষ খবর। যার হাত থেকে ক্ষমতা এনেছি গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে এখন আমরা তার চেয়েও বেশী অগতন্ত্রপ্রিয় হয়ে গেছি। যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বলেছি তাদের নিয়ে সরকারও ঘটন করেছি। আর যাকে স্বৈরাচারী বলে বিদায় করেছি তাকে নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। ফলে নৈতিক ও আদর্শ বিরোধী লোকেরা আমাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে আমাদের রক্তে ক্যান্সারের জীবানু ঢুকিয়ে দিয়েছে। তাই আমরা এখন অসুস্থ গনতন্ত্র চর্চা করছি। আর অসুস্থ গনতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে ও যেতে আমরা গাছের ডাল পালাও ভেঙে ফেলছি। তাহলে এমন সময় অপ্রত্যাশিত নয় যে যখন হয়ত গাছটিও হুমকির মুখে পরতে পারে।
আমরা যুক্তরাষ্ট্র. যুক্তরাজ্য কে অসম্মান করেছি। আমাদের অগনতান্ত্রিক ভাষা দিয়ে তাদের অপমান করেছি। জাতিসংঘ, এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউমান রাইটস ওয়াচ সহ অনেক বড় বড় সংস্থাকে আমরা সঠিকভাবে আমাদের কথা বুঝাতে পারছি না। সবশেষ তুরস্ক, পাকিস্তান এমনকি ভারতও আমাদের প্রতি নাখোশ বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের সব চেয়ে বড় দোষ হল, আমরা শালিনতার মাধ্যমে কথা বলতে পারি না। কথায় কথায় অশ্লীল কথা বলি। অশ্লীল কথার মাধ্যমে আমরা অপরকে উত্ত্যক্ত করি। আমাদের নায্য কথাটা সঠিকভাবে না বলে অশ্লীলতার মাধ্যমে উপস্থাপন করায় আমরা বিরাগভাজন হই।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, অশুদ্ধভাবে পাওয়া ও থাকার হত্যাশা থেকে আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে অনেকটাি এলামেলো হয়ে গেছি। আমরা অনেকটাই আগাছার উপর নির্ভর করে ফেলছি। ফলে আস্তে আস্তে আমাদের পায়ের নীচের মাটি সরে যাচ্ছে দিন দিন।
ইতিহাস বলছে, সরকারী দল যে কোন ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীদের দোষারোপ করতে একটুও সময় নেন না। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত ছাড়াই আসামী ঘোষনা হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত তদন্ত পথ হারিয়ে ফেলে। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে গিয়ে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় পরে যাচ্ছি।
এ ছাড়া আমরা ক্ষমতায় থাকার জন্য সব করতে পারছি। বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি থাকবে না মুছে যাবে তা নিয়েও আমরা চিন্তিত নই। বিশ্বে বসবাস করতে চাইলে সকলের সঙ্গে সাধ্যমত মিলে মিশে চলতে হবে এই সৌজন্যতা নেই আমাদের।
গতকাল থেকে দেখা গেলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবি নিয়ে হৈ চৈ পড়ে গেছে। ছবিটির উপর নির্ভর করে সরকার এক রাজনীতিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। আর যে অভিযোগ সরকার করছে তার বিপরীতে কথা বলছে ঘটনাস্থল বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত ও অভিযুক্ত ইসরায়েলী রাজনীতিক। ফলে নতুনভাবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে আরো দুটি দেশের সঙ্গে। তদন্ত না করে ও মামলা না দিয়ে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার কারণে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধী দমনের জন্যও কাজটি হয়ে থাকতে পারে এমন কথাও ভাসছে। ফলে এতে মনে হচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে আমরা যেমন আচরণ করছি দেশের বাইরেও আমরা তা করছি।
জাতির আবেদন থাকবে, শালীনতার মাধ্যমে যেন আমরা নিজেদের সমস্যা দেশের ভেতরে ও বাইরে উত্থাপন করি। কোন ঘটনার পর তদন্ত শেষে কথা বললে প্রকৃত অপরাধী বেরিয়ে আসতে পারে। আর আস্তে আস্তে গনতন্ত্রের দিকে ধাবিত হওয়াও উচিত। তা না হলে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়ে দেশের ভেতরে ও বাইরে আমরা অকেজা হয়ে যেতে পারি।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম