সরকার কোন নীল-নকশা ধরে এগোচ্ছেÑ সেটাই এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, বিদেশী হত্যা থেকে শুরু করে শিয়া সম্প্রদায়, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ, হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মগুরুদের ওপর নৃশংস আক্রমণ ও সিরিজ হত্যা সরকারের ভ্রুক্ষেপহীনতার কারণেই ক্রমাগতভাবে চলমান থাকছে। সরকারের নির্বিকার আচরণের কারণেই একের পর এক হত্যাকাণ্ডগুলোতে দেশের রাজনৈতিক কুজ্ঝটিকা ঘন ও রহস্যময় হয়ে উঠেছে।
দেশে জঙ্গিদের অস্তিত্ব নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যও জনমনে এক বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলে সরকার কোন নীল-নকশা ধরে এগুচ্ছে? বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী চাকপাড়া বৌদ্ধ বিহারে ধাম্মা ওয়াসা মং শৈ উ চাক নামে একজন ভিক্ষুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে দেয়া এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন এ সব কথা বলেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের ভূখণ্ডের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ ও সংস্কৃতির পরম্পরায় সম্প্রীতি ও পরস্পরের প্রতি শুভেচ্ছাবোধ এক অনবদ্য জ্বাজল্যমান উপাদান, সেখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ ও সংঘাতের কোন অধ্যায় নেই। এটি একটি অতি সাম্প্রতিক প্রপঞ্চ। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মনে হয় অশুভ পশুশক্তির কাছে নি:স্বার্থ আত্মনিবেদন করেছে। তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠী শুরু থেকেই বন্য প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই সমস্ত পৈশাচিক ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে তা বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। এটি বিরোধী দলের প্রতি তাদের স্বভাবসুলভ অন্ধ হিংসার বহিঃপ্রকাশ।
তাদের বক্তব্যের ধরণ দেখে মনে হয়- হত্যাকাণ্ডগুলোয় প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের আস্তানা ধ্বংস ও তাদের পাকড়াও করা নয়, তাদের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই সমস্ত বর্বর হত্যাকাণ্ডগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা। আর সেজন্যই চটজলদি বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানো হয়। এই কারণেই কাণ্ডজ্ঞানহীন জঙ্গিগোষ্ঠী উৎসাহিত হয়ে প্রাণবিনাশী কর্মকাণ্ড পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, যে সরকার ভিন্নমতকে দমন করতে, সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্দয়ভাবে ব্যবহার করে চলেছে, সে সরকার নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে লাশ আর রক্তপাতকে চিরস্থায়ী সঙ্গী করে নিতে যে দ্বিধা করবে না, তা বলাই বাহুল্য।
জনমতকে তাচ্ছিল্য করে প্রধানমন্ত্রীর জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখা, দায়িত্বজ্ঞানহীন উক্তি ও একগুঁয়েমি ও নিজ দলের লোকদের অনাচারকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণেই দেশে অপরাধকর্ম ও দুষ্কৃতকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তিনি বলেন, ভোটারবিহীন সরকার দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে নিজেদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। আর সেজন্যই তারা দানবীয় চক্রান্ত এঁটে চলেছে।
কারন আওয়ামী লীগ অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, হিংসা ও হত্যায় উৎসাহী একটি দল। মানব সভ্যতা বিনাশী মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গিদের উৎপাত শুরু হয় আওয়ামী আমল থেকেই। আমরাই ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করি। খালেদা জিয়া প্রশ্ন তুলে বলেন, এদেশ কেন জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হলো? আওয়ামী শাসনামলেই কিভাবে বেআইনী, সভ্যতা, প্রগতি বিরোধী অশুভ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিচরণ এতো তীব্র হলো? কেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ও ধর্মগুরুদের জীবন যাচ্ছে? আর কতদিন সাধারণ জনগণকে ভয়ার্ত পরিবেশের মধ্যে জীবন-যাপন করতে হবে? তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষমতা সরকার হারিয়ে ফেলেছে। কারন গণবিরোধী, ভোটারবিহীন সরকার আসল কাজের পরিবর্তে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই বেশি ব্যস্ত। বিএনপি চেয়ারপারসন ধাম্মা ওয়ামা মং শৈডি চাক-এর আত্মার শান্তি কামনা ও অবিলম্বে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সেই সঙ্গে তিনি নিহতের পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানান।