প্রাকৃতিক বিপর্যয়; বজ্রপাতে দুই দিনে ৬৩ জনের প্রাণ গেল

Slider জাতীয়

001_211884

বজ্রপাতে আজ শুক্রবার নয় জেলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী ও নওগাঁয় তিনজন করে মারা যান। গতকাল মারা গিয়েছিল ৪৮জন। দুই দিনে মারা গেলে ৬৩ জন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের ১৪ জেলায় বজ্রপাতে ৩৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় পাঁচজন করে মারা যান।

রাজবাড়ী: বজ্রপাতে কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তিনজন হলেন কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন ব্যাপারী (৪০), ভাগলপুর গ্রামের জাহের আলী শেখ (৪৫) ও গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের ওমেদ ব্যাপারী পাড়ার সোবহান সরদার (৫০)।
হরিণবাড়িয়ার স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, বিল্লাল বেলা দেড়টার দিকে খেতে কাজ করছিলেন। এ সময় তিনি বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আর জাহের আলী দুপুরে তাঁর খেতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে মারা যান। স্থানীয় রতনদিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলিউজ্জামান চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গোয়ালন্দে মৃত সোবহান সরদারের ছোট ভাই জাকির সরদার জানান, দুপুরে সোবহান খেত থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হন। এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব দে সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নওগাঁ: তিন উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন আত্রাই উপজেলার বিষা উত্তর গ্রামের বজ্রপাতে জয়নাল উদ্দিন (৬৫), পোরশা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের দীঘিপাড়া গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন (১৪) ও মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের ধনঞ্জইল গ্রামের শচীন মহুরী (৪৮)। আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাদ্দরুরেজ্জা ও মহাদেবপুর থানার ওসি সাবের রেজা তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সুনামগঞ্জ: জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলি ইউনিয়নের কামারখাল গ্রামের বাসিন্দা আমির উদ্দিন (৩০) বজ্রপাতে মারা গেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ির পাশের হাওরে কাজ করার সময় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জগন্নাথপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মুরসালিন।
কিশোরগঞ্জ: জেলার তাড়াইল উপজেলার নয়াপাড়া এলাকায় বজ্রপাতে এমরান মিয়ার (২৮) মৃত্যু হয়েছে। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার গগডা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তাড়াইল উপজেলার ধলা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।
ধলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মবিন বজ্রপাতে একজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বজ্রপাতে এমরান আহত হন। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে বেলা পৌনে একটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: শহররক্ষা বাঁধের রাসমণি ঘাট এলাকায় আমজাদ আলী (২৩) নামের এক তরুণ ও আনোয়ারা উপজেলার বদলুপুরা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন (১৭)।
পাহাড়তলী থানার ওসি রণজিৎ কুমার বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, রাসমণি ঘাট এলাকায় আমজাদের মৎস্যচাষ প্রকল্প রয়েছে। সকালে বৃষ্টি শুরু হলে প্রকল্প এলাকায় আসেন তিনি। সেখানে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথেই বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান আমজাদ।

জয়পুরহাট: জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেতলাল উপজেলায় বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ঢেঁকেরপাড় গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও ক্ষেতলাল উপজেলার ঘুগইল গ্রামের মানিক মিয়া (৩৮)। ক্ষেতলাল থানা-পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খোর্দ্দমালিবাড়ি গ্রামে বজ্রপাতে সিরাজুল হক (৬০) নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
সিরাজুলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সকাল আটটার দিকে জমিতে বোরো ধান দেখতে গেলে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাভার: ঢাকার সাভার পৌর এলাকার রেডিওকলোনী মহল্লায় মন্টু হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর বজ্রপাতে মারা গেছে। সে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আমতলি গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্টু দুপুরে রেডিওকলোনী বালুর মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলছিল। হঠাৎ বজ্রপাতে সে গুরুতর আহত হয়। তাকে স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

মাগুরা: সদর উপজেলার মঘি ইউনিয়নের কাপাশহাটি গ্রামে সন্ধ্যায় বজ্রপাতে তুহিন শেখ (২২) নামের এক তরুণ মারা গেছেন। মাগুরা সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লায়েকুজ্জামান জানান, তুহিন বাড়ির পাশে মাঠে কাজ করছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *