সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ক্ষমতার অবৈধ দখলদারিত্ব যেন শাসক গোষ্ঠীকে স্বেচ্ছাচারিতার অবাধ ছাড়পত্র দিয়েছে। তারা দেশকে এক অসভ্যতার অন্ধকারে ডুবিয়ে দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের কোনো কথা না শুনলে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের ওপর নিগ্রহ নেমে আসে। স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্যের বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতির অবসান কল্পে সবার অংশগ্রহণে একটি জাতীয় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এসব বলেন।
তিনি বলেন, আইনের শাসনকে পদদলিত করে দেশে পেশীশক্তি-নির্ভর এক বর্বর আওয়ামী দুঃশাসন চাপিয়ে দেয়ার বেপরোয়া ও ধারাবাহিক অপপ্রয়াসে সচেতন নাগরিক সমাজ আজ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
বিএনপি প্রধান বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে জবরদস্তি ও অপকৌশলের মাধ্যমে বর্তমান অবৈধ সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে। এই শাসকদের সরাসরি মদদ ও আস্কারায় তাদের চ্যালা চামুন্ডারা দেশজুড়ে উচ্ছৃঙ্খলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। নির্লজ্জ দলীয়করণ ও যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীসমূহের আইনসম্মত পন্থায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো অবকাশ এরা রাখেনি। তারপরও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রশাসন, পুলিশ, সীমান্তরক্ষীসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর দৈহিক হামলা ও সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, অন্যায় আবদার রক্ষা ও বেআইনি নির্দেশ পালন এবং বিধিবহির্ভূত সম্মান ও সুযোগ দিতে অস্বীকার করলেই রাষ্ট্রীয় কর্তব্য পালনে নিয়োজিত কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হাতে হেনস্তা ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। মাঠ প্রশাসন পর্যায়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ করে তার নির্বাচনী এলাকা ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম রকিব হায়দারকে সম্প্রতি পিটিয়ে আহত করার ঘটনাটির কথা উল্লেখ করতে চাই। স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে তাকে সরকারি কর্তব্য পালনরত অবস্থায় প্রকাশ্যে মারধর করে আহত করা হয়েছে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবাধে দায়িত্ব পালন এখন কতোটা অসম্ভব ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, ফেনীর ঘটনা তার এক জ্বলন্ত প্রমাণ। সারা দেশে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। কোনো ঘটনা নিয়ে বেশি তোলপাড় হলে চোখে ধুলা দেয়ার জন্য সাময়িক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ধামাচাপা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিকার বা সুষ্ঠু বিচার হচ্ছে না। ফাঁকে-ফোঁকড়ে শাসক দলের কোনো নেতা-কর্মী আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত হলেও বিশেষ অনুকম্পায় তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আওয়ামী নেতা-কর্মীরাও ছাড়া পেয়ে নতুন নতুন ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত করছে। অপরদিকে বিনা দোষে মিথ্যা মামলায় বিরোধীদলের অগণিত নেতা-কর্মী ও সাধারণ নাগরিকেরা দুঃসহ নিপীড়ন ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়া পরশুরামের ইউএনওর ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান, যাতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
বিএনপি নেত্রী বলেন, দুর্নীতি, দুঃশাসন, স্বেচ্ছাচারিতা ও নৈরাজ্যের বর্তমান দুঃসহ পরিস্থিতির অবসানকল্পে সবার অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক জাতীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে একটি প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।