বজ্রপাতে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ ১১ জেলায় ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর যাত্রবাড়ীতে দুজন এবং পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহীতে পাঁচজন করে মারা গেছেন। কিশোরগঞ্জে মৃত্যু হয়েছে চারজনের।
ঢাকা: যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় বিকেলে বজ্রপাতে দুই যুবক মারা গেছেন। তাঁরা হলেন শাহেদ সোহাগ (২৪) ও নোমান হাসান (২২)। এ ছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত পাঁচজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকেলে বৃষ্টির সময় যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকার বালুর মাঠে ফুটবল খেলছিলেন কয়েকজন যুবক। হঠাৎ বজ্রপাতে যুবকদের মধ্যে আট থেকে ১০ জন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহেদ ও নোমানকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অন্যজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর নাম রাইয়ান (১৯)। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহত শাহেদ আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নোমান তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ছিলেন। তাঁদের একজনের বাড়ি যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কাজলায়, অন্যজনের বাড়ি যাত্রাবাড়ীর সাইনবোর্ড এলাকায়।
যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান এ ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রায়গঞ্জ উপজেলায় তিনজন ও উল্লাপাড়া উপজেলায় দুজন মারা যান। রায়গঞ্জ উপজেলায় মৃত ব্যক্তিরা হলেন: মোতালেব (৪০), আনোয়ার (৩৫) ও শিশু নুপুর (৮)। উল্লাপাড়ায় মারা গেছেন আবদুল লতিফ (৩৫) ও খোকন (৫০)।
রায়গঞ্জ বড়পাঙ্গাসি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম ও উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান কৌশিক আহমেদ বজ্রপাতে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বগুড়া: বগুড়ার শেরপুরে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন: উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেতগাড়ী গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৪০) ও বেটখৈর গ্রামের ছখিনা খাতুন (৫৫)। সীমাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন তালুকদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজশাহী: মোহনপুর, গোদাগাড়ী ও দুর্গাপুর উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন, মোহনপুর উপজেলার আতা নারায়ণপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (২৮), হতাতৈড় গ্রামের আবদুল আজিজ (৫০) ও ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের শ্রী সৈত চন্দ্র (৩০), গোদাগাড়ী উপজেলার গুসিরা গ্রামের লাইলী বেগম (৪০) ও দুর্গাপুর উপজেলার পালশা খামারুপাড়া এলাকার মর্জিনা বেগম (৪০)।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলমগীর কবির বজ্রপাতে তাঁর এলাকার তিন ব্যক্তি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পাবনা: পাবনার সুজানগর ও চাটমোহরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হন আরও ৪ জন।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন, সুজানগর উপজেলার রানিনগর গ্রামের মইন উদ্দিন (৭০), তাঁর নাতনি শিখা খতুন (১২), একই উপজেলার আহম্মদপুর গ্রামের শহিদ হোসেন (৫০), চাটমোহর উপজেলার মল্লিক বাইন গ্রামের ফজলুর রহমান (৪০) ও ছকির উদ্দিন (৭০)
সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, আমরা তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হতে পেরেছি।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
পিরোজপুর: মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়হারজী গ্রামে বিকেলে বজ্রপাতে মো. ইউনুস সিকদার (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আয়শা বেগম (৪০) নামের এক গৃহবধূ দগ্ধ হন।
ইউনুস সিকদারের বাড়ি উপজেলার বড়হাজরী গ্রামে। আয়েশা বেগম ইউনুস সিকদারের বড় ভাই কুদ্দুস সিকদারের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, আজ বিকেলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে ইউনুস সিকদার ও তাঁর ভাইয়ের স্ত্রী আয়শা বেগম বাড়ির সামনের মাঠ থেকে গরু আনতে যান। এ সময় বজ্রপাতে ইউনুস সিকদার ঘটনাস্থলে মারা যান ও আয়শা বেগম দগ্ধ হন। গুরুতর দগ্ধ আয়শা বেগমকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় আজ দুপুর ১২টার দিকে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তিনজন হলেন: উপজেলার চরশিবপুর গ্রামের সফিকুল ইসলাম, ইছাপুর গ্রামের সামছুল ইসলাম ও কানাইনগর গ্রামের কবির হোসেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অংশু কুমার দেব ওই তিনজনের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর: কাপাসিয়া উপজেলার উত্তরখামের গ্রামে বিকেলে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই দুজন হলেন: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সাতান্না গ্রামের মো. সাত্তার আলী (২৬) এবং কাপাসিয়ার খিরাটি গ্রামের কাজল মিয়ার স্ত্রী রুবিনা (৪০)।
কাপাসিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান বলেন, সাত্তার আলী উত্তরখামের গ্রামে জমিতে ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। অপরদিকে গৃহবধূ রুবিনা মাঠ থেকে গরু নিয়ে ফেরার পথে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
নেত্রকোনা: কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নে বজ্রপাতে রইছ উদ্দিন (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কিশোরগঞ্জ: বজ্রপাতে হোসেনপুর উপজেলায় শরিফুল ইসলাম (১৮) নামের এক তরুণ, বাজিতপুর উপজেলার দিলালপুর ইউনিয়নের বাহেরনগর গ্রামের স্বপন মিয়া (১৯), পিরিজপুর ইউনিয়নের কইকুরী গ্রামের রিজিয়া বেগম (৫২) ও তাড়াইল উপজেলার জাওয়ার ইউনিয়নের ইশাবশর গ্রামের মমতা বেগম (৪৪) মৃত্যু হয়েছে।
হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নান্নু মোল্লা, তাড়াইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শওকত জাহান, দিলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ও পিরিজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর ইকবাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাটোর: নাটোরের লালপুর উপজেলার চারটি পৃথক স্থানে বজ্রপাতে এক নারীসহ দুইজন নিহত ও দুইজন আহত হয়েছে।
লালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, বৃহষ্পতিবার সন্ধার আগমুহুর্তে লালপুর উপজেলার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হয়। এ সময় আম কুড়াতে গিয়ে উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মোবারক হোসেন (২৪) ও উত্তর লালপুর গ্রামের সাহারা বানু নিহত হন। এছাড়া কাজিপাড়া গ্রামের সাজেদুর রহমান ও মহরকয়া গ্রামের পাপিয়া খাতুন আহত হন। আহতদের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হাই তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (ঢাকা ও রাজশাহী), পিরোজপুর, বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), গাজীপুর, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা), কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা, নাটোর প্রতিনিধি, পাবনা অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক, ভৈরব, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি}