আপাতত বদলাবে না নাম ও নেতৃত্ব

Slider রাজনীতি
13612_jmt
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলের শীর্ষ নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নেতৃত্ব বদল করবে না জামায়াতে ইসলামী। চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন নামে দলও গঠন করবে না। দলের একটি অংশ নাম-নেতৃত্ব বদল করে নতুন দল গঠনের পক্ষপাতী হলেও বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে তা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। জামায়াতের কর্মপরিষদ ও মজলিসে শূরার দু’জন সদস্যের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় দলটির শীর্ষ দুই পদ শূন্য। তারসহ দলের শীর্ষ চার নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। অপর নায়েবে আমির আবদুস সোবহান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। তাদের বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন সম্ভব নয় বলে

জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। তাদের বিচারের মধ্য দিয়ে সাবেক এমপি আবদুল খালেক মণ্ডল ব্যতীত উল্লেখযোগ্য সব জামায়াত নেতার বিচার শেষ হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধের ইস্যুটি শেষ হলে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে হাত দেবে জামায়াত। এমনই আভাস দিয়েছেন দলটির কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ জয়নুল আবদিন। জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, বিচার চলা অবস্থায় কোনো নেতাকে বাদ দেওয়ার মানে, জামায়াত তার অবস্থান থেকে সরে এসেছে। নীতিগত কারণেই তাই নেতৃত্ব বদল সম্ভব নয়।

জামায়াতের আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছয় মাসের অধিককাল দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে নতুন আমির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল। গত বছরের জুনে প্রকাশিত গঠনতন্ত্রের সর্বশেষ সংস্করণে এ বাধ্যবাধকতা বাতিল করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে রাজপথে সহিংসতার অভিযোগে কারাগারে গেছেন কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতারা। এ কারণে ২০১২ ও ২০১৫ সালের রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। বছরে দুই বার মজলিসে শূরার অধিবেশন হওয়ার কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরে একবারও হয়নি। গঠনতন্ত্রের ২৩ (৭) ধারা অনুযায়ী, কর্মপরিষদ মজলিসে শূরার বিকল্প হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই পরিষদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের এখতিয়ার নেই।

মজলিসে শুরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘জামায়াতকে সভা-সমাবেশরই অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। রুকন সম্মেলন কিংবা মসলিসে শূরার অধিবেশন করার অনুমতি তো কিছুতেই দেবে না।’ তিনি বলেন, ‘রুকন সম্মেলন ছাড়া আমির নির্বাচন সম্ভব নয়। আমির নির্বাচিত না হলেও সেক্রেটারি জেনারেল ও অন্যান্য পদও পূরণ সম্ভব নয়।’

জামায়াতের সর্বশেষ কমিটির ছয় নায়েবে আমিরের তিনটি পদই শূন্য। আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ ও এ কে এম নাজির আহমেদ মারা গেছেন। আমৃত্যু দণ্ডিত হয়েছেন সাঈদী। আরেক নায়েবে আমির আবদুস সোবহানের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান কারাগারে আছেন দীর্ঘ দিন ধরে। একমাত্র সক্রিয় নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন।

সহাকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দু’জন মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। এটিএম আজহারের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক তিন বছর ধরে বিদেশে। একমাত্র সক্রিয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন।

নেতৃত্বের মতো নামও বদল করবে না জামায়াত। এ বিষয়ে দলটির অবস্থান হলো, চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে গঠনের প্রশ্নই আসে না। তবে জামায়াতের একটি অংশ নতুন নামে উদার গণতান্ত্রিক দল গঠনের পক্ষে। গত ছয় বছর ধরেই উদারপন্থিরা এ দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিমত নতুন নামে গঠন ছাড়া রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না জামায়াত। কিন্তু অপরাংশের অভিমত_ রাজনৈতিক সমীকরণের কারণেই সরকার তাদের মাঠে নামার সুযোগ না দিলেও নিষিদ্ধ করবে না। বরং যথাসম্ভব কোণঠাসা করে রাখবে। এ পরিস্থিতে নতুন দল গঠনের প্রচেষ্টা সফল হবে না। বরং সরকার তাদের আগের মতোই চাপে রাখবে। তাই নাম বদলেও ফল পাওয়া যাবে না।

জামায়াতের এক আইনজীবী কর্মপরিষদ সদস্য  বলেন, ‘যতদিন জামায়াত আছে, ততদিন আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধী প্রচারণা চালানোর সুযোগ আছে। সাধারণ মানুষকে জামায়াতের নামে মিথ্যা ভয় দেখানোর সুযোগ আছে। জামায়াত না থাকলে আওয়ামী লীগের প্রধান অস্ত্রই হাতছাড়া হয়ে যাবে।’

জামায়াত নেতাদের মতো একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবিরও মনে করেন জামায়াত নিষিদ্ধের প্রশ্নে ‘রাজনীতি’ আছে। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন জামায়াত সন্ত্রাসী দল। সরকারের মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। সরকারের একটি অংশ চায় না দলটি নিষিদ্ধ হোক।’

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেই জামায়াত। পাঁচ বছরে দলটির অন্তত পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হলেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সহানুভূতি পায়নি। এ বিষয়টিকেই জামায়াতের ঘুরে দাঁড়ানো কিংবা নতুন নামে আসার বড় বাধা মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা মনে করে, নাম বদলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। নেতাককর্মীরা বিভক্ত হয়ে যাবেন। দল বিলুপ্ত হয়ে যাবে। জামায়াতের এক তরুণ আইনজীবী নেতা বলেন, ”নাম পাল্টানো কোনো সমাধান নয়। ‘অনুকূলে’ পরিবেশের জন্য নীরবে অপেক্ষা করা টিকে থাকার একমাত্র উপায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *