অভিযোগ প্রত্যাখ্যান সুইফটের

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব

9623482c0426954089cbc5df902e1ca7-download

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের নিরাপত্তায় নিজেদের টেকনিশিয়ানদের ফাঁকফোকর রেখে যাওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক মাধ্যম সুইফট। নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই ছিল বলে মনে করে সুইফট।

পুলিশ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গতকাল সোমবার এই অভিযোগ তোলার পর সুইফটের প্রধান মুখপাত্র নাতাশা দা তেরান রয়টার্সের কাছে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাংলাদেশ ব্যাংকে সুইফট তাদের নিজস্ব বা বাইরে থেকে কোনো কারিগর পাঠিয়েছিল কি না, তাও বলতে চাননি। তবে পরে এক বিবৃতিতে সুইফট অভিযোগ নাকচ করে।

সুইফটের ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়, এ ব্যাপারে সুইফটের কোনো দায় নেই। সার্ভারের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। সুইফট ব্যবহারকারী অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ সব ব্যাংকিং পদ্ধতির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকেরই ছিল বলে সুইফট মনে করে।

সুইফটের বিবৃতিতে বলা হয়, আজ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বাসেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, সেখানে ব্যাংকের নিরাপত্তা ইস্যু ও এসব ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ নিয়ে আলোচনা হবে।

গতকাল রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিজার্ভ চুরির তদন্ত দলের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. শাহ আলম বলেন, সুইফটের টেকনিশিয়ানরা ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ফিলিপাইনে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির তিন মাস আগে মেসেজিংয়ে নতুন একটি লেনদেন পদ্ধতি (রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম আরটিজিএস) যুক্ত করেন। এ সময়েই তাঁদের অবহেলার কারণে সার্ভারের নিরাপত্তায় ফাঁক থেকে যায়। ফলে সার্ভার অরক্ষিত হয়ে পড়ে। হ্যাকাররা সহজেই এতে ঢোকার সুযোগ পায়।

গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শাহ আলম বলেন, এ বিষয়ে সুইফটের টেকনিশিয়ানদের কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। এখানে সুইফটের সাত-আটজন টেকনিশিয়ান কাজ করেছেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের বক্তব্য জানতে চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাঁদের এই কর্মকাণ্ড অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (নিউইয়র্ক ফেড) ও সুইফটের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করছে। আজ প্রতিষ্ঠান দুটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সভা হওয়ার কথা। প্রতিনিধিদলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসিও রয়েছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, বাসেল বৈঠকে অংশ নেবেন নিউইয়র্ক ফেডের সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ডাডলি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, রিজার্ভের অর্থ চুরি ও অর্থ আদায়—এ দুটিই মূল আলোচনার বিষয় হবে। তবে সভায় বসার পরই বোঝা যাবে আলোচনা কোন দিকে মোড় নেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সুইফটের বার্তা ব্যবহার করে যে ৩৫টি আদেশ পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে ৩০টি আদেশ আটকে দেয় নিউইয়র্ক ফেড। বাকি পাঁচটি আদেশ কাজে লাগিয়েই ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে মোট ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৮০০ কোটি টাকা চুরি করা হয়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ফেডের কাছ জানতে চাইবে, ৩০টি আদেশ আটকানো সম্ভব হলে পাঁচটি আদেশ কেন আটকানো গেল না? বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, এ ক্ষেত্রে নিউইয়র্ক ফেড তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সাইবারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেডে) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। তবে ফিলিপাইনে যাওয়া অর্থ এখনো ফিরে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *