প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ দাবি করেছেন, আগের তিন ধাপের তুলনায় ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তবে অনিয়মের অভিযোগে ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দাবি করে বলেছে, আগের ধাপগুলোর তুলনায় অনেক ভালো নির্বাচন হয়েছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তবে বিএনপি অভিযোগ করেছে, আগের মতো চতুর্থ দফা নির্বাচনেও সরকার ভোট জালিয়াতির মহোৎসব চালিয়ে সব কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা মহাশ্মশানে পরিণত হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে সামনের যে কোনো নির্বাচনই আওয়ামী লীগের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পরিণত হবে।
এদিকে ইসি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল যে ৫১টি কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে তার বেশিরভাগেই আগের রাতে ও ভোট শুরুর পরপরই ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়ে গেছে।
কুমিল্লা :ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের চান্দলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুর দুই ঘণ্টা পর দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে তাপস চন্দ্র দাস (৩৬) নামে এক যুবক নিহত হন। ওই কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন কবির জানান, ওই যুবক কেন্দ্রে ভোট দিতে আসার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কোপালে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। নিহত তাপস উত্তর চান্দলা গ্রামের কানু চন্দ্র দাসের ছেলে। এ ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয় বলে জানান এসআই। ঘটনার পরপরই ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
নিহত তাপস মোরগ প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী রেজাউল করিমের সমর্থক ছিলেন বলে জানা গেছে। প্রতিপক্ষ টিউবওয়েল প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী সুলতান আহমেদের সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তার পিঠে, মাথায় ও বুকে জখমের চিহ্ন রয়েছে। বুড়িচং থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান জানান, কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ওই যুবক নিহত হন। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে তারা তৎপর রয়েছেন। এদিকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদী :রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামে হোসেন আলী (৫৫) একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে মধ্যনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুদুর রহমানের সমর্থকরা জালভোট দেওয়ার সময় বাধা দেন হোসেন আলী। এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আরও সাতজন আহত হন। হোসেন আলীকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিন বলেন, দুর্বৃত্তরা হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
ঠাকুরগাঁও :বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালডাঙ্গা দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুপুর ২টার দিকে মেম্বার প্রার্থী মো. আলম ও রিয়াজ উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ করে। এতেও সংঘর্ষ না থামলে গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মাহবুব আলমকে (২৫) মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ আজিজুল ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ফেনী :ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের জগন্নাথ সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই দুই মেম্বার প্রার্থী শাহজাহান ও আনোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় ব্যাপক বোমা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভপক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। ভাংচুর করা হয় মেম্বার প্রার্থী শাহজাহানের বসতঘর। গুলিবিদ্ধ শাহজাহান, তার স্ত্রী হোসনে আরা, জয়নাল আবেদীন ও আমান উল্লাহকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বহিরাগতদের হামলায় কবির আহাম্মদ, মুসা মিয়া ও রফিকুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নে দুর্বত্তদের বোমা ও গুলিতে এসআই ইয়াছিনসহ আহত হয়েছেন ২০ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া :বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর কেন্দ্রের সামনে মেম্বার প্রার্থী হেকিম মিয়া ও শিশু মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জাকির হোসেন নামে এক যুবক টেঁটাবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হন। একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীমুড়া ভোটকেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। আখাউড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর গ্রামে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হন। ধরখার ইউনিয়নে ঘোলখার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন্দ্র দখলের চেষ্টাকালে বহিরাগতদের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ :সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের মিল্কীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা আকস্মিক কর্তব্যরত পুলিশের এসআই রবিউল ইসলামের মাথায় আঘাত করে। এ সময় তাদের হামলায় পাশে দাঁড়ানো আনসার সদস্য সাঈদ হোসেনও আহত হয়। এ সময় তারা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালালে পুলিশ ৩ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও হামলায় পুলিশ ও মেম্বার প্রার্থীসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারসহ একাধিক অভিযোগে ১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
লক্ষ্মীপুর :রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের উত্তর বামনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মেম্বার প্রার্থী ইমরান হোসেন মুকুল পাটওয়ারীসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। সদর উপজেলার টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। শাকচর হামিদিয়া নুরানী মাদ্রাসা ও টুমচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র প্রকাশ্যে জালভোট দেওয়ার অভিযোগে এক পোলিং এজেন্টসহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
পাবনা :সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের মোমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম আমিন ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ওমর আলীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় হেদায়েত হোসেন নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের নাওয়াপাড়া গ্রামের ভোটকেন্দ্রের পাশে পিস্তলসহ কামরুজ্জামান টিটু নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশ।
চাঁদপুর :মতলব দক্ষিণ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ রহমানসহ আহত পাঁচজনকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যালট পেপারে সিল মারতে দেখা গেছে।
রংপুর :মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোদাচ্ছির হোসেন লাবলু অভিযোগ করেন, সাহালামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঢুকে আওয়ামী লীগের লোকজন জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে তার এজেন্ট ময়না মিয়া বাধা দেন। পরে ময়না মিয়াকে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে ছুরিকাঘাত করা হয়। এদিকে গোপালপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা হারুন অর রশীদকে কেন্দ্র থেকে আটক করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম :হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে পিস্তল, গুলিসহ আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার দায়ে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আরও সাতজনকে আটক করা হয়েছে। ধলই ইউনিয়নের পশ্চিম এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন আজিজুর রহমান ও ইকবাল নামে দুই যুবক।
জামালপুর :মাদারগঞ্জের নলছিয়া, বিন্নাফৈর, নলকা, চরভাটিয়ানিসহ ১০ কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় সুলতানা রাজিয়া নামে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, রওশন আরা নামে আনসার সদস্য এবং করইচুড়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রিয়ারদানী রুপাইয়ের ভাই প্রভাষক গোলাম রব্বানীসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন।
মানিকগঞ্জ :সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লী ইউনিয়নের চরতিল্লী আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী শওকত আলী ও ইমরান হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫ জন আহত হন।
নোয়াখালী :সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা ইউনিয়নের কালুয়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মহিলা মাদ্রাসা কেন্দ্র্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে সময় রাছেল নামে এক যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। দেওটি ইউনিয়নের দেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র, বাবুল আচার্যসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন।
ময়মনসিংহ :ফুলবাড়িয়া উপজেলায় ভবানীপুর সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে জাল ভোটে সহযোগিতা করায় দুই সহকারী প্রিসাইডিং, তিন পোলিং অফিসার ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ১২ এজেন্টসহ ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
কিশোরগঞ্জ :কুলিয়ারচরে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদিকে মাগুরা, জামালপুর, নড়াইল ও চুয়াডাঙ্গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
বাগমারায় পুলিশের গুলিতে নিহত ২
রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে দু’জন নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে হাটগাঙ্গোপাড়ার এ ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। পুলিশের দাবি, সংঘর্ষ থামাতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় গুলিতে দু’জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- উপজেলার সরঞ্জি ভাসুপাড়া গ্রামের মফিজ উদ্দিনের ছেলে ইউনিয়ন কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান (২৮) ও একই এলাকার ময়েজউদ্দিনের ছেলে রঞ্জু (৪৮)।
এদিকে, সংঘর্ষে গুরুতর আহত ১০ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কান্দা গ্রামের জাহিদ হাসান, ছানন্দ এলাকার মনতাজ, উজ্জ্বল, মসলেম, মইনুল, ইসহাক, আলম, আলাউদ্দিন, আতাউর রহমান ও শফিকুল ইসলাম। তাদের মধ্যে উজ্জ্বল ও মোসলেম ছাড়া সবাই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত মমতাজ উদ্দিন ও জাহিদুল ইসলাম নামের অপর দু’জন রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে আউচপাড়া ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সরদার জান মোহাম্মদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হন আউচপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুজ্জামান শহীদ। কিন্তু নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন বাগমারা আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হককে শোকজ করে উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করে। এর পর উপজেলার দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়।
গতকালের সংঘর্ষ প্রসঙ্গে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহীদের সমর্থকরা নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় আনন্দ করতে থাকে। ওই সময় তাদের ওপর হামলা করে জান মোহাম্মদের সমর্থকরা। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। লাঠিসোটা, হাঁসুয়া, রামদা নিয়ে তারা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময় ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে জান মোহাম্মদের সমর্থকরা তাদের ওপরও হামলা করে। বাগমারা থানার ওসি মতিয়ার রহমান ও এএসআই আমিনুল ইসলামকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়।
রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি খুরশিদ আলম জানান, পুলিশের ওপর হামলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সদস্যরা গুলি করেন। এ সময় দু’জন নিহত হন। সংঘর্ষকারীদের হামলায় ওসি, এএসআইসহ আরও চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান তিনি।
বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু দাবি করেন, শহিদুজ্জামান শহীদের সমর্থকরা হাটগাঙ্গোপাড়া বাজারে থাকা জান মোহাম্মদের সমর্থকদের দোকান বন্ধ করে দেয়। বিকেলে জান মোহাম্মদের সমর্থকরা বন্ধ দোকান খুলে ফিরছিল। ওই সময় তাদের ওপর পুলিশ পেছন থেকে গুলি চালাতে শুরু করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে।