নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছাড়াও কৌশলগত কারণে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে কাশিমপুর কারাগারও। প্রয়োজনে সেখানেও ‘দুই ঘণ্টার নোটিশে’ ফাঁসি কার্যকর করার মতো প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় কারাগার সম্পূর্ণ প্রস্তুত না হওয়ায় সেখানে নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।
গতকাল মতিউর রহমান নিজামীর করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকল। পুনর্বিবেচনার রায় কোনো মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপ। দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে এখন মাত্র একটি ধাপ বাকি রয়েছে। তা হলো সর্বশেষ সুযোগ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া। নিজামী প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে যে কোনো সময় তার দ কার্যকর করা যাবে।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন বলেন, রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি এখনও কারাগারে পেঁৗছেনি। সেটি পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোন কারাগারে দণ্ড কার্যকর হবে, সে ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
কাশিমপুর ২ নম্বর কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, নিজামী কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছেন। তাকে অন্য কোনো কারাগারে স্থানান্তরের নির্দেশনা এখনও পাননি।
ওই কারাগারের জেলার মো. নাশির আহমেদ বলেন, এ ধরনের কয়েদিরা চাইলে অনুমতি নিয়ে নিজেদের কাছে এক ব্যান্ডের রেডিও রাখতে পারেন। সেই রেডিওতে গতকাল রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার খবর শুনে কিছুটা বিমর্ষ ছিলেন নিজামী।
এদিকে, রায় কার্যকরকে ঘিরে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি-র্যাব-পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সরকার সিদ্ধান্ত জানালে দুই ঘণ্টার মধ্যে ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন কারা-সংশ্লিষ্টরা।
আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছেন, সেটি সংক্ষিপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ লিখিত আকারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যাবে। রায়টি নিজামীকে পড়ে শুনিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে চাইবেন, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না। পরিবারের সঙ্গে ‘শেষ দেখার’ সুযোগ দেওয়া হবে।
দ বিধি আইন ও জেলকোড অনুসারে সাধারণত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্ত জানাতে সর্বোচ্চ সাত দিনের সময় পান মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন অনুযায়ী জেলকোড অনুসরণ করতে হবে না। এর আগের চার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়ও এ বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি। আবদুল কাদের মোল্লা ছাড়াও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে প্রাণভিক্ষার নিয়ম অনুযায়ী সময় দেওয়া হয়েছিল। কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান শেষ পর্যন্ত প্রাণভিক্ষা চাননি। মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরী নিজেদের একাত্তরের কৃতকর্ম স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেও রাষ্ট্রপতি তাতে সাড়া দেননি।