শনিবার আন্তর্জাতিক গুম দিবস

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

51024_odikar logo

গ্রাম বাংলা ডেস্ক: ৩০ আগস্ট আন্তর্জাতিক গুম দিবস। গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ, তাদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানো এবং গুমের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘অধিকার’ দিবসটি পালন উপলক্ষে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে এবং গুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীসহ সর্বস্তরের নাগরিকদের প্রতি।

অধিকারের ঘোষণাপত্রে বলা হয় বিরুদ্ধমত দমন এবং  রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে গুম।  বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে সমাজে বিভিন্ন  শ্রেণি ও গোষ্ঠির মধ্যে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও নীতিনৈতিকতার য়, মানবাধিকারের প্রতি মতাসীনদের চরম ঔদাসীন্য এমন এক পরিস্থিতির তৈরি করেছে, যাতে বিরুদ্ধ মতকে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে দমন করা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার চরম রূপ হচ্ছে সরকারি এজেন্টদের হাতে নাগরিকদের গুম হয়ে যাওয়া। এরপর সেই গুম হওয়া ব্যক্তির আত্মীয় স্বজন কেউই আর তার হদিস পায় না।
এতে সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলেও ক্ষমতাসীনরা তা নির্দ্বিধায় অস্বীকার করতে থাকে এবং কোনো কার্যকর তদন্ত করে না।

অধিকারের ঘোষণাপত্রে বলা হয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই অপরাধটি নতুন নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গুমের ঘটনা ঘটে, যা যুদ্ধ পরবর্তীকালেও বিভিন্ন সরকারের আমলে অব্যাহত আছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের  মধ্যে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান এবং বিপ্লবী বামপন্থী নেতা সিরাজ সিকদার ও ১৯৯৬ সালে ুদ্রজাতি গোষ্ঠির নেত্রী কল্পনা চাকমা অন্যতম।
স্বাধীনতার পরপরই বিপ্লবী বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে বহু তরুণ-যুবককে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী হত্যা বা গুম করে। পরে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় আসা বিভিন্ন  সামরিক শাসনামলেও এই ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল যে, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারগুলো এই অপরাধের সমাপ্তি ঘটাবে এবং দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হয়েছে যেন ঠিক তার বিপরীত। তাই সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যাযবিচারের ভিত্তিতে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন এবং সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করতে বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত হওয়া এবং এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাই গুমসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিটি মানবাধিকার কর্মীকে সোচ্চার হতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অধিকারের ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয় বিগত কয়েক বছর ধরে গুমের ঘটনা আবারও ঘটতে শুরু করেছে, যা বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করে গুরুতর অপরাধের আরেকটি মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আইন শৃংখলা রাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভিকটিমদের পরিবারগুলোর দাবি, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁদের প্রিয়জনদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এরপর তাঁরা গুম হয়েছেন; তাদের কারো কারো লাশও পরে পাওয়া গেছে।

২০১০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম এবং ২০১২ সালে সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনা, ২০১২ সালে শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম ও ২০১৩ সালে একই সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু ও লাকসাম পৌর বিএনপি’র সভাপতি হুমায়ন কবির পারভেজ, ২০১৩ সালে ঢাকায় একইদিনে সাজিদুল ইসলাম সুমন, মাজহারুল ইসলাম রাসেল, আব্দুল কাদের ভুইয়া মাসুম, আল আমিন, মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান রানা, তানভীর, এএম আদনান চৌধুরী, ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার নজরুল ইসলাম ও এডভোকেট চন্দন সরকারসহ মোট ৭ জনের গুম ও হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট পর্যন্ত ১৫০ জন গুমের শিকার হয়েছেন।

উল্লেখ্য, অধিকার তখনই গুমের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে, যখন গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবার এবং প্রত্যদর্শীরা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অথবা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় ছিল।
গুম বা এনফোর্সড ডিস্অ্যাপিয়ারেন্স মানবতার বিরুদ্ধে একটি অপরাধ  যা আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। গুম হতে সকল ব্যক্তির সুরার জন্য আন্তর্জাতিক সনদের অনুচ্ছেদ-২ এ এটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ‘গুম করা’ বলতে বোঝায় ‘রাষ্ট্রীয় অনুমোদন, সাহায্য অথবা মৌনসম্মতির মাধ্যমে কার্যত রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি বা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক সংঘটিত গ্রেফতার, বিনা বিচারে আটক, অপহরণ অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে স্বাধীনতা হরণকে; যা কিনা সংঘটিত হয় স্বাধীনতা হরণের ঘটনাকে অস্বীকার অথবা গুম করা ব্যক্তির নিয়তি এবং অবস্থানের তথ্য গোপন করে তাকে আইনী রাকবচের বাইরে রাখার ঘটনাগুলোর মাধ্যমে সংঘঠিত ঘটনা। ‘গুম’ কোন ব্যক্তির বাক স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং সংগঠনের স্বাধীনতাকে খর্ব করে। গুম জনিত অপরাধকে ধারাবাহিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, কারণ আটক বা অপহরণের পর এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে।  গুম মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের একটি হাতিয়ার। শাস্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রার নামে গুমজনিত অপরাধ তাঁদের বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হয়, যাদেরকে সরকার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে।
এদিকে গুম দিবস উপলক্ষে এশিয়ান ফেডারেশন এগেনস্ট ইনভলানটারি ডিসএপ্যিারেন্সেস এক বিবৃতিতে বলেছে, গত কয়েক বছর ধরে এশিয়ার নাগরিাকরা সবচেয়ে বেশি গুমের শিকারে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গুমের ঘটনা বিস্তারলাভকারী এশিয়ার ১৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সংগঠনটির প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *