বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে আরও ২৫ কোটি পেসো (ফিলিপাইনের মুদ্রা) ফেরত দিয়েছেন ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কাম সিন অং ওরফে কিম অং।
শেষ দফায় বুধবার ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কমিশনের (এএমএলসি) কাছে তার আইনজীবীর মাধ্যমে অং এ অর্থ ফেরত দেন বলে বৃহস্পতিবার দেশটির সংবাদপত্র ‘দ্য ইনকোয়ারারের’ অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে।
এর আগে ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংয়ের পক্ষ থেকে গত ৩১ মার্চ ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার, ৪ এপ্রিল আট লাখ ৩০ হাজার ৫৯৫ ডলার এবং ১৮ এপ্রিল ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার এএমএলসিকে ফেরত দেওয়া হয়।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সিস্টেম ব্যবহার করে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সংরক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার সরানোর চেষ্টা হয়। এর মধ্যে চারটি বার্তার মাধ্যমে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরশন (আরসিবিসি) ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আরেকটি বার্তার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার একটি এনজিওর নামে ২ কোটি ডলার পাঠানো হলেও বানান ভুলের কারণে তা আটকে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনাটি দেশে জানাজানি হয় মার্চের প্রথম সপ্তাহে। মাস খানেক আগে চুরি হওয়া ওই অর্থ ফেরত পেতে বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত গোপনে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে জোর তৎপরতা শুরু করে।
শেষ দফায় বুধবার অর্থ ফেরত দেওয়ার পর এক বিবৃতিতে অং বলেন, ‘আমি ব্লু রুবিন কমিটির কাছে ১৫-৩০ দিনের মধ্যে বাকি অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলাম। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার একদিন আগেই সেটা করলাম।’
ফিলিপিন্স স্টার জানিয়েছে, ম্যানিলার ব্যাঙ্কো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপিন্স (বিএসপি) কমপ্লেক্সে কিমের আইনজীবী ক্রিস্টোফার জেমস পুরিসীমা এএমএলসির কাছে এ অর্থ জমা দেন। তিনটি বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে এ অর্থ হস্তান্তর করা হয়; যার একটি ব্যাগে ২৩০ মিলিয়ন পেসো, একটিতে এক হাজার মিলিয়ন পেসো এবং আরেকটিতে ব্যাগে ছিল ২০ মিলিয়ন পেসো।
এই নিয়ে এএমএলসির কাছে কাছে কিম অং ৪৮৮ দশমিক ২৮ মিলিয়ন পেসো ফেরত দিলেন বলেও জানিয়েছে ফিলিপিন্স স্টার।
প্রসঙ্গত, ফিলিপাইনের দৈনিক দ্য ইনকোয়ারারে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ডলার মানি লন্ডারিং হয়েছে বলে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আরসিবিসি ব্যাংকের মাকাতি শাখার মাধ্যমে ওই অর্থ ফিলিপাইনে আসে। চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সেখানকার কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় গত ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন; অব্যাহতি দেয়া হয় দুজন ডেপুটি গভর্নরকেও। একই দিন রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি মামলার পর তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এছাড়া এই চুরির ঘটনার তদন্তে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে করা হয় তিন সদস্যের কমিটি। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন ও ৭৫ দিনে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা পড়লেও ওই প্রতিবেদনে কী রয়েছে তা এখনও জানা যায়নি।