স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠি থেকে জানা যায়, কায়কোবাদের বহিঃসমর্পণ প্রস্তাব যথাসময়ে আবুধাবিতে পৌঁছানো হয়নি। কায়কোবাদকে ‘ওয়ারেন্ট তালিকাভুক্ত’ রাখতে এবং পুনরায় গ্রেপ্তার করতে বহিঃসমর্পণ নথি পাঠাতে আবুধাবির ইন্টারপোলের শাখা থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই নথি বিচারিক আদালতে পুনরায় উপস্থাপন করা হবে।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের সাবেক সাংসদ কায়কোবাদকে ২০১১ সালের ৩ জুলাই দেওয়া এ মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়। তখন তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আর দেশে ফেরেননি।
আর মাওলানা তাজউদ্দিন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় ২০০৮ সালে দেওয়া প্রথম অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি ‘পাকিস্তানের পাসপোর্ট’ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি জানিয়ে তাজউদ্দিনের প্রকৃত তথ্য যাচাই করতে তাঁর পাসপোর্ট-সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে ইন্টারপোল। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্টারপোল শাখা কার্যালয় বাংলাদেশের পুলিশকে জানিয়েছিল, বাদল নামে ভুয়া পাসপোর্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন তাজউদ্দিন।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। এতে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ শতাধিক ব্যক্তি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিষয়ে অনেক তথ্যই রয়েছে পলাতক আসামি তাজউদ্দিনের কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে কয়েকটি চিঠি চালাচালিও হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল ইন্টারপোল থেকে ই-মেইল পাঠানো হয়। ২৫ এপ্রিল চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। পিন্টু নিজেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, এখন কারাগারে আছেন।
পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ নিশ্চিত করে, মাওলানা তাজউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা না হলেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে বহিঃসমর্পণের প্রস্তাব পাঠাতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তাজউদ্দিনকে দেশে ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করার দৃশ্যমান তৎপরতা আগে দেখা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, তাজউদ্দিন নাম পাল্টে এবং অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে দক্ষিণ আফ্রিকায় গেছেন বলে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ২০০৬ সালের অক্টোবর তাজউদ্দিনকে বাংলাদেশ বিমানের করাচিগামী ফ্লাইটে তুলে দেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার উপমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। সে সময় দেশটির উপমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আবেদন করলে তাঁরা এই আসামিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তাজউদ্দিনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছে। এখন কিছু তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, যাতে কোনো ফাঁক-ফোকর না থাকে। এ বিষয়ে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’